‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত’: ভয়ের সংস্কৃতি প্রভাব ফেলছে শ্রেণিকক্ষে

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে শিক্ষক হেনস্তার যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে শ্রেণিকক্ষে স্বাভাবিক পাঠদানে চাপ তৈরি হওয়ার কথা জানাচ্ছেন শিক্ষকরা; ‘অপমান এড়াতে’ ভয় নিয়েই যাচ্ছেন ক্লাসে।

কাজী নাফিয়া রহমান নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 07:44 PM
Updated : 28 June 2022, 08:23 PM

আলোড়ন তৈরি করা সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পর শিক্ষক ও বিশিষ্ট নাগরিকরা মনে করছেন, স্থানীয় বিরোধসহ অন্যান্য ঘটনাকে ‘ধর্মীয় রঙ’ দিয়ে শিক্ষকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

‘ভয়ের সংস্কৃতি’ তৈরি করা এসব ঘটনা ঠেকাতে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে বলছেন তারা। পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের তাগিদও এসেছে।

বিষয়গুলো বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও ঘটনার পেছনে জড়িতদের ‘সামনে না আনায়’ এসব বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা দেশজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের হেনস্তা করার ঘটনাগুলোকে ‘সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নড়াইলে একজন অধ্যক্ষকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পুলিশের উপস্থিতিতে গলায় জুতার মালা পরানো তেমনই একটি ঘটনা।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু শিক্ষকদের নির্যাতনের এমন ঘটনা নতুন নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে অপদস্ত করা হয়।

নারায়ণগঞ্জে ২০১৬ সালে এমনই এক নির্যাতনের শিকার বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের দাবি, তার সাথে যা হয়েছিল তা ‘পরিকল্পিতভাবেই’ হয়েছে। দেশজুড়ে এমন আরও ঘটনা ঘটছে, যা বন্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিশেষ ভূমিকা নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের আরও বড় ভূমিকা থাকা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা কিন্তু সেটা সেভাবে দেখছি না। সরকার ও গণমাধ্যম জোরালো ভূমিকা রাখলে এটা বন্ধ হয়ে যাবে।”

পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর এই ছবি ছড়িয়েছে ফেইসবুকে।

এমন ঘটনার সবশেষ শিকার হয়েছেন নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস; ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে যাকে পুলিশের সামনে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে, যার প্রতিবাদ চলছে দেশজুড়ে।

মঙ্গলবারও ওই শিক্ষককে অপদস্ত করা এবং সাভারে আরেক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ দমনে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক।

এক বিবৃতিতে তারা বলেন, “স্মরণকালে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর মত ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করিনি। শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ কোন স্তরে নেমে গেছে তা ভেবে আমরা আতঙ্কিত। সাম্প্রদায়িকতা কীভাবে আমাদের সমাজকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত করেছে তা দেখে আমরা দিশেহারা।”

অভিযোগ রটিয়ে উত্তেজনা তৈরি, হেনস্তা

বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচনায় থাকা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে এক শিক্ষার্থীর ফেইসবুক পোস্ট নিয়ে নড়াইলের ঘটনার সূত্রপাত।

স্থানীয়দের দাবি, পরদিন কলেজে কিছু মুসলমান শিক্ষার্থী তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলে। ওই সময় স্বপন কুমার বিশ্বাস ‘ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর তাকে হেনস্তা করা হয়।

মাস তিনেক আগেও এমন রটনা তৈরি করে আরেক সংখ্যালঘু শিক্ষককে অপদস্ত করা হয়, পাঠানো হয় কারাগারে।

ক্লাসে ‘ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে উত্তেজনা তৈরি করা হয়। পরে মামলা হয় এবং ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঠানো হয় কারাগারে।

কারগারে ১৯ দিন থাকার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের মুখে তার জামিন হয়, ভয় আর শঙ্কার মধ্যে তিনি বাসায় ফেরেন।

এর আগে ২০১৬ সালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনাও পুরো দেশকে স্তম্ভিত করেছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে ওই ঘটনা ঘটার অভিযোগ এসেছিল।

শ্রেণিকক্ষের আলোচনার সূত্র ধরে ধর্ম অবমাননার মামলায় গ্রেপ্তার মুন্সীগঞ্জের স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ১০ এপ্রিল বিকালে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।

সে সময় দেশজুড়ে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ দেখা গেলেও এ ঘটনায় কাউকে বিচারের সামনে দাঁড়াতে হয়নি। উল্টো শ্যামল কান্তিকে ঘুষের মামলায় জেলে যেতে হয়, যে মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।

এসব ঘটনা ‘অহরহ ঘটতে’ থাকাকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলছেন অবসরে যাওয়া শ্যামল কান্তি ভক্ত। এজন্য তিনি দায় দিচ্ছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও স্থানীয় রাজনীতিকে।

“ম্যানেজিং কমিটিগুলোই নোংরা ভিলেজ পলিটিক্সে বেশি জড়িত। তাদের পকেটের প্রধান শিক্ষক না হলে, নীতি-নৈতিকতা নিয়ে চললে- তাদের ক্ষেত্রেই এসব বেশি ঘটে। এগুলো অনাকাঙ্খিত। শিক্ষক জাতির মেরুদণ্ড, মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের প্রতি এমন অমানবিক ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।”

পরিস্থিতি শ্রেণিকক্ষকে কতটা কঠিন করে তুলেছিল জানতে চাইলে চরম হেনস্তার শিকার ওই শিক্ষক বলেন, “এরপর শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে গেলেই মনে হত, আমি এ ধরণের অবমাননার শিকার হয়েছি।”

তার প্রশ্ন- “যাকে জুতার মালা পরানো হয়েছে, সেই শিক্ষক কীভাবে আর স্বাভাবিকভাবে ক্লাস নেবেন? তিনি দ্বিধায় ভুগবেন, কোন কাজ বা কথার কারণে আবার অপমানের শিকার না হন।”

‘ভয়ের সংস্কৃতি’

শ্রেণিকক্ষের আলোচনাকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একদল শিক্ষার্থীর দাবির মুখে গত মার্চে মুন্সিগঞ্জে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে আটক করা হয়েছিল।

এসব ঘটনা কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তাদের অনেকেই এক ধরনের ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছেন, যা স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে বাধা দিচ্ছে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের শহীদ জয়নাল আবেদীন সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শিমুল চন্দ্র দাস বলেন, “এগুলো দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। ক্লাসে কথা বলতে গেলেও অনেক ভেবে বলতে হয়। শঙ্কা নিয়ে ক্লাস করাতে হয় এবং বুঝে শুনেও কথা বলতে হয়। পাঠদানের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা চলে এসেছে।”

এ ধরনের ঘটনার অবসান চেয়ে তিনি বলেন, “আমরা যেন সম্মানজনক অবস্থানে থাকতে পারি, এটাই চাওয়া এবং সংযত থেকে আমরা যেন আমাদের কার্যক্রমগুলো করি।”

বরিশালের বানাড়ীপাড়ার তেতলা পি জি এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আশীষ সরকার বলেন, “শ্রেণিকক্ষে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। অনেক সংযত হয়ে, মেপে ছাত্রদের সাথে কথা বলতে হয়।

“আমরাও ভয়ে থাকি, আমাদের সাথেও এমন ঘটনা না ঘটে। আমরা শিক্ষকদের সাথে কখনও উদ্ধত আচরণ করিনি। এখন যেগুলো হয়ে থাকে।”

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নৈতিকভাবে এগুলোর প্রতিবাদ করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা এখন আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। আগে শিক্ষকদের একটা শাসন ছিল, এখন সেই জায়গাটা বন্ধ- যে কারণে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। শাসন করতে গিয়ে যদি চাকরি চলে যায়, এই ভয়েই কিছু বলা যাচ্ছে না।”

তবে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা সব এলাকার পরিস্থিতি এরকম নয় বলে মনে করেন কোনো কোনো শিক্ষক। রাজবাড়ীর বরাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত পাল বলেছেন, তারা এসব ঘটনায় ‘খুব বেশি আতঙ্কিত নন’।

“রাজবাড়ির লোকজন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেই বসবাস করে। আমাদের এলাকায় সাধারণত এ ধরনের ঘটনা ঘটে না।”

লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন কারা?

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি দেশজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে।”

নড়াইলে একজন অধ্যক্ষকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পুলিশের উপস্থিতিতে গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনাটিকে তিনি “প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রশাসন যে সাম্প্রদায়িকদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, তার উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ৯ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক মনে করেন, সমাজের ধর্মান্ধ, উগ্র ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সুযোগ পেলেই এ ধরনের উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে; যেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে নির্যাতন করা হচ্ছে।

“কিছু না হলেও একটা স্ট্যাটাস দিয়ে এটা শুরু করে দেয়। (অভিযোগ থাকলে) প্রশাসনকে জানাতে পারে, কিন্তু কান ধরানো বা গলায় জুতার মালা পরানোর মত ন্যক্কারজনক ঘটনা তো তারা করতে পারে না।”

তার মতে, এভাবে স্কুলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘এক ধরনের বিভেদ’ তৈরি করা হয়। এমন ঘটনায় শিক্ষকদের ভয়-শঙ্কার মধ্যে থাকতে হয়, এগুলো শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের তাগিদ দেন অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক।

বন্ধ হচ্ছে না কেন?

জুতার মালা পরানোর মত ঘটনা ‘সভ্য জগতে আশা করা যায় না’ মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাদার তপন কামিলুস ডি রোজারিও বলেন, “এই ঘটনাগুলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথেই ঘটছে। হয়ত পূর্ব শত্রুতা, প্রাতিষ্ঠানিক শত্রুতা থাকতে পারে।

“তদন্তে যেগুলো বেরিয়ে আসে, সেগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব এসবের কিছু কারণ স্থানীয়, ভিন্ন মাত্রার। সার্বিকভাবে একটা বিদ্বেষ, হেয় করার বা ভয় দেখানোর বিষয় থাকতে পারে।”

বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হলেও ‘ঘটনার পেছনে জড়িতদের সামনে না আনায়’ তা বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করেন ফাদার তপন।

তার ভাষ্য- এগুলো কারা ও কেন করেছে, পরিকল্পিতভাবে করেছে কি না কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা বা হিন্দু বিদ্বেষ কি না, সেই প্রশ্ন আসেই।

“যারা ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, সেগুলো যদি তুলে আনা যেত- তাহলে কিন্তু এটার মূল পেতাম যে, কোনো না কোনোভাবে এখানে এক ধরনের বিদ্বেষ কাজ করছে। এগুলো আগে আমরা দেখিনি আমাদের সমাজে।”

এ ধরনের ঘটনার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এক ধরনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ঘটনা ঘটলেও সেগুলোর বিচার হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ঘটনাগুলোর মধ্যে ধর্মানূভূতিতে আঘাতের অভিযোগ আসে। কে করেছে, কেমন করে হচ্ছে- খবরই তো নেওয়া হচ্ছে না। আমরা দেখছি যে, নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে।

“এর পেছনে কারা আছে? সেই ধৃষ্টতা তারা কীভাবে পায়? সরকারকে এ ধরনের ঘটনায় চুপ করে থাকলে হবে না। সরকারকে একেবারে রুট লেভেলে গিয়ে দেখতে হবে, শক্ত হাতে এগুলো দমন করা উচিত।”

এই শিক্ষকের ভাষায়, “হঠাৎ করে কিছু হচ্ছে না। ... এগুলো পরিকল্পিত ঘটনা। আমরা এ ধরনের রাজনীতি, ধর্মান্ধতা দেখতে চাই না। ধর্মকে পুঁজি করে বারবার আঘাত হানা বন্ধ করতে হবে।

“আমরাও নীরব হয়ে যাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি না। নড়াইলে ঘটনার সময় শিক্ষকরা প্রতিবাদ করতে পারত, করেনি।”

এসব ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতি অন্য ধরনের হয়ে যাচ্ছে। স্কুলের ম্যানেজমেন্ট কমিটি, গভর্নিং কমিটি এগুলোর মধ্যে তো এমপিরা যাচ্ছে। তারা কি জানে না যে তার নির্বাচনী এলাকা বদলে যাচ্ছে? অপশক্তি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে?

“মাইনরিটি আমার ভোটার, তাকে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মত শব্দগুচ্ছ কি শুধু বই-লাইব্রেরিতে থাকবে? নাকি আমরা চর্চার মধ্যে আনব?”

সেজন্য শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বৈষম্যমূলক শিক্ষা পাচ্ছে। তারা ভালোভাবে বাংলায় লিখতে পারছে না। এসব শিক্ষার্থীকে উদ্বুদ্ধ করা খুব সহজ। ধর্মটা প্রধান হয়ে গেছে। বিজ্ঞান, অংক, বাংলা, ইংরেজি- অন্য বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে না।

“এসব চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা লেখাপড়াটা কীভাবে শেখাচ্ছি? প্রাইমারি শিক্ষকের বেতন খুব কম। কারা হচ্ছে শিক্ষক? তারা কি আসলেই ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ চাচ্ছে?”