আশুলিয়া ও নড়াইলের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ১৭ নাগরিকের বিবৃতি

সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং নড়াইলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ দমনে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 03:43 PM
Updated : 28 June 2022, 03:43 PM

মঙ্গলবার এই নাগরিকদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। গণমাধ্যমে এ বিবৃতিটি পাঠান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ।

বিবৃতিতে বলা হয়, “স্মরণকালে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর মতো ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করিনি। শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ কোন স্তরে নেমে গেছে তা ভেবে আমরা আতঙ্কিত। সাম্প্রদায়িকতা কিভাবে আমাদের সমাজকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত করেছে তা দেখে আমরা দিশেহারা।”

বিবৃতিদাতারা হলেন- সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, সেলিনা হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, সারোয়ার আলী, ফেরদৌসী মজুমদার, আবেদ খান, আবদুস সেলিম, লায়লা হাসান, মফিদুল হক, শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসির মামুন, হারুণ হাবীব, শফি আহমেদ, শিমূল ইউসুফ, সারা যাকের ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।

উত্ত্যক্ততার ঘটনায় শাসন করায় গত শনিবার সাভারের আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিষ্ঠানটির দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।

এদিকে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচনায় থাকা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেইসবুকে এক ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন ‍কুমার বিশ্বাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “চলমান এই সাম্প্রদায়িক ঘটনা কি প্রমাণ করে না যে আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি? মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িকতার ছোবলে ক্ষতবিক্ষত। মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত। সামাজিক মর্যাদা অদৃশ্য। কোথায় চলেছে বাংলাদেশ?

“আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে বাংলাদেশের সমাজ ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মব্যবসায়ীদের অপ-তৎপরতার কারণে সমাজ বিভক্ত হচ্ছে ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। জামাত-হেফাজত চক্র এবং প্রশাসনের একাংশের প্ররোচনায় ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িকতার অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে উপক্রম হয়েছে।”

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কঠোর হস্তে দমনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করুন। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির আলোকে শিক্ষা, প্রশাসন সহ রাষ্ট্রের সকল কার্য সাধনের প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি। আর বিলম্ব নয় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পথ হারাবার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।”