পদ্মা সেতুতে উঠবেন কি না, ‘ভয়ে’ বিএনপির হারুন

পদ্মা সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেও ওই সেতুতে উঠতে নিজের ভয়ের কথা বললেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2022, 03:10 PM
Updated : 26 June 2022, 05:04 PM

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন রোববার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি হাস্যরস করে এ কথা বলেন।

হারুন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধনে দাওয়াত দিলেন। আমার পাশে কাজী ফিরোজ রশীদ সাহেব আছেন। পিছনে নিক্সন চৌধুরী আছেন। তারা তাদের এলাকায় যেতে আমাকে দাওয়াত দিলেন। আজকে দেখলাম মাননীয় সদস্য শাজাহান খান বলেছেন, পদ্মা সেতুতে উঠবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিচ্ছেন আর একজন সদস্য বলছেন পদ্মা নদীতে উঠবেন না। আমরা কী করব!”

এসময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হাসতে দেখা যায়।

স্পিকারের আসনে থাকা এ বি তাজুল ইসলাম এ সময় বলেন, “সর্বোচ্চ ব্যক্তির দাওয়াত আপনি গ্রহণ করবেন।”

হারুন বলেন, “মাননীয় স্পিকার এখন দাওয়াত দেবেন, ওদিকে আরেকজন ভয় দেখাবেন। আমি তো আতঙ্কে আছি যে পার হতে গিয়ে আমাকে পদ্মাতে ডুবিয়ে দেবে কি না, ফেলে দেবে কি না!”

এর আগে শাজাহান খান বলেন, “পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলাকালে খালেদা জিয়া ঈর্ষান্বিত হয়ে বলেছিলেন- আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। পদ্মা সেতু জোড়া তালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। উঠতে রিস্ক আছে। আপনারা কেউ পদ্মা সেতুতে উঠবেন না।

“বিএনপি নেতৃবৃন্দ এখানে আছেন। দয়া করে আপনারা কেউ পদ্মা সেতু পার হইয়েন না। আপনাদের নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করবেন না। আপনাদের জন্য আমরা নদীর পাড়ে নৌকা রেখে দেবো। সেই নৌকায় দরকার হলে আপনাদের পার করব।”

হারুন বলেন, “পদ্মা সেতু আমরা নিজেদের অর্থায়নে করেছি। এটা আমাদের গৌরব। এটা নিয়ে তীর্যক কথা বার্তা। গতকাল যোগাযোগমন্ত্রী (সড়ক পরিবহনমন্ত্রী) বলেছেন, ‘বিএনপির মন খারাপ’। না, আমাদের মন খারাপ নয় মাননীয় স্পিকার। আমাদের মন কেন খারাপ হবে? আমরা আনন্দে আছি। আমাদের মন খারাপ হচ্ছে, আমরা মুজিববর্ষ পালন করলাম, আমরা পদ্মা ব্রিজ উদ্বোধন করলাম, কিন্তু আমরা বাংলাদেশে যে গুম ও খুনের সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গেছে, এখান থেকে বের হতে পারব? আমরা ভোটের অধিকার যে হারিয়ে ফেলেছি, সেটা কি আমরা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব?

হারুনুর রশীদ। ফাইল ছবি

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি সেদিকে দৃষ্টি দেন। এদিকে নজর দেন। আপনি যতই বলেন না কেন, মানুষ এখন দ্রব্যমূল্যের যে মহা উর্ধ্বগতিতে রয়েছে, সেদিকে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে। আপনি যতই মানুষকে পদ্মা ব্রিজের স্বপ্ন দেখান আর মেট্রো রেলের স্বপ্ন দেখান আর মহা প্রকল্প দেখান, মানুষের পেটে খাদ্য চায়। মানুষ আজকে দুর্বিষহ অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় মানুষ বাঁচতে চায়। বাঁচার জন্য তাদের অর্থ দরকার। এ অর্থ তারা চায়।”

হারুন বলেন, “জাতীয় সংসদ এখন মহাজোটের জাতীয় কার্যালয় হয়ে গেছে। শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া একটা জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা যায় না।”

তিনি বলেন, “জনপ্রশাসন এখন আওয়ামী প্রশাসন হয়েছে। কোনো কাজ হচ্ছে না। সারাক্ষণ পলিটিক্যাল কাজ নিয়ে তারা ব্যস্ত। জেলায় দুজন ডিসি নিয়োগ দেওয়া যায়। একজন হবেন ডিসি অ্যাডমিন আর একজন হবেন ডিসি পলিটিক্যাল।”

হারুনুর রশীদ বলেন, “এই বাজেট ব্যাপক ঋণনির্ভর। ৪০ শতাংশ আসবে দেশি বিদেশি ঋণ থেকে। এর মধ্যে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা বিদেশি ঋণ। বাজেট আবার বৈদেশিক ঋণনির্ভর বাজেটের দিকে ধাবিত হচ্ছে।”

বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে হারুন বলেন, “এই সুযোগ কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না। এটি কার্যকর করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে। এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতেই হবে।”

শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে হারুন বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা খারাপ। শিক্ষক সংকটের কারণে ৩০ শতাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম নেই। মাধ্যমিক, উচচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার অবস্থা ভয়াবহ।”