টিএসসিতে ‘বন্যার্তদের জন্য কনসার্ট’ সোম ও মঙ্গলবার

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বানভাসিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে ওয়ারফেইজ, আর্ক, অ্যাশেজসহ দেশের ২১টি ব্যান্ড দলের অংশগ্রহণে সোম ও মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজন করা হচ্ছে ‘বন্যার্তদের জন্য কনসার্ট’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2022, 11:01 AM
Updated : 26 June 2022, 11:01 AM

প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এ সঙ্গীতায়োজন। টিকেটের মূল্য ধরা হয়েছে তিনশ টাকা, যার পুরোটাই বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সমন্বিতভাবে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। এরই অংশ হিসেবে এ কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে।

রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে তাদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে আহ্বায়ক কমিটি।

গত ২১ জুন গঠিত এই কমিটিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছকে আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসকে সদস্যসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়াকে উপদেষ্টা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামসহ দেশের যেকোনো দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সবসময় পাশে ছিল। ১৯৮৮ ও ৯৮ সালে দেশে যে সবচেয়ে বড় প্লাবন হয়েছিল, সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি ছিল সরকারের পরে বৃহত্তম ত্রাণ তৎপরতা কেন্দ্র। এখানে শত শত ছাত্র-ছাত্রী ও সংস্কৃতি কর্মী কাজ করেছে।

“সেই অতীতের অধিকারী আমরা। ব্যক্তি হিসেবে সেটা আমাদের পূর্ব পুরুষেরা করেছে, এখন আমরা করছি, ভবিষ্যতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম করবে। ঐতিহ্য তো এভাবেই তৈরি হয়। মানবিকতার দৌড়ে প্রতিযোগিতা করা অনেক গৌরবের। সেই দিক থেকে টিএসসির ছাত্র বন্ধুরা নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আমরা যুক্ত হয়েছি তাদের পরামর্শ ও গাইড করতে।”

ইতোমধ্যে প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মূল কাজ হলো ফান্ড সংগ্রহ। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের মতো করে মাঠ পর্যায়ে কালেকশন করছে, আমরাও বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, ইতোমধ্যে দশ লাখ টাকার মতো কমিটমেন্ট আমরা পেয়ে গেছি।

“এর মধ্যে চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল পাঁচ লাখ, তার স্ত্রী বর্ষা এক লাখ টাকা দেওয়ার কমিটমেন্ট দিয়েছেন। আরও কয়েকজন এক লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা এরকম আরও ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আজকের মধ্যেই আমরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে ফেলব।”

আগামী ৩০ জুনের পর থেকে সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য, ঔষধসহ প্রয়োজনীয় ‘উপহার’ সামগ্রী বিতরণ করা হবে বলে জানান গোলাম কুদ্দুছ।

সদস্য সচিব অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “সরকার বা রাষ্ট্র যে ত্রাণ শব্দটা ব্যবহার করে, এটার বিরুদ্ধে আমি। ত্রাণের মধ্যে এক ধরনের করুণার ব্যাপার থাকে। জনগণের টাকায় রাষ্ট্র চলে। আজকে জনগণের একটা অংশ বিপদে পড়েছে, তাদের টাকা তাদের দেওয়া কোনো করুণা নয়। ‍আমরা কিন্তু সচেতনভাবে কোথাও ত্রাণ শব্দটা লিখি নাই।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি, জনগণের টাকায় আমার বেতন হয়, শিক্ষার্থী ভর্তুকি নিয়ে পড়ালেখা করছে। এই সুনামগঞ্জের মানুষের টাকাও এখানে আছে। যাদের টাকায় আমরা পড়ালেখা করি, তাদের একটা অংশ আজ বিপদে পড়েছে। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদের সভাপতি দিগার মোহাম্মদ কৌশিক জানান, ‘বন্যার্তদের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন’ উদ্যোগের সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া কক্ষে একটি সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে অর্থ সংগ্রহের কার্যক্রম চলছে। টিএসসির পায়রা চত্বরে ‘উন্মুক্ত মঞ্চ” স্থাপন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা করার আহবান জানাচ্ছে।

“কনসার্ট থেকে প্রাপ্ত সকল অর্থ ব্যয় করা হবে বন্যার্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রয়াসে। আমাদের কনসার্টে যেসব ব্যান্ড দল অংশ নিচ্ছে, তাদের কেউ টাকা নিচ্ছেন না। পুরো অর্থ আমরা বন্যার্তদের জন্য ব্যয় করব।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে টিএসসির পরিচালক সৈয়দ আলী আকবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বক্তব্য দেন।

আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন স্লোগান' ৭১ সংগঠনের সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন হাসান শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের সভাপতি আরাফাত আরেফিন উৎস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক জয় দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হিমু পরিবহনের সাধারণ সম্পাদক তুষার চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স সোসাইটির সভাপতি মাহমুদা কবির শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটির সভাপতি মো. নাজমুস সাকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির অর্থ সম্পাদক শিবলী হাসান জয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম।