ওই এলাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পেছনের সড়কে রোববার সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. আতিক। হাত নেড়ে গাড়িকে সংকেত দিতে দিতেই তিনি বললেন, অন্য দিনও ভিড় থাকে, তবে এখন দম ফেলার অবকাশ পাচ্ছেন না।
“বুঝতেছেন! কত গাড়ি ঢাকায় ঢুকতেছে, সব ব্যক্তিগত গাড়ি। আগে এত গাড়ি ঢাকায় ঢুকত না, এখন পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে আসতেছে।”
ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এই ২১টি জেলার মাওয়া রুট ব্যবহারকারী বাসসহ যানবাহনগুলো এতদিন ফেরিতে পারাপার হত।
এখন পদ্মা সেতু পার হয়ে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যানবাহন আসছে কেরানীগঞ্জ থেকে বুড়িগঙ্গা সেতু আর বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে ঢুকছে ঢাকায়। একই পথে ঢাকা থেকে শয়ে শয়ে যানবাহন ছুটছে পদ্মা সেতুর দিকে।
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোরবেলা থেকে এই অবস্থা। অনেক অনেক গাড়ি ঢুকতেছে ঢাকায়, আর ফুলবাড়িয়া দিয়ে গাড়ি ভরে মানুষ বের হচ্ছে। গাড়ি সামাল দিতে হাত নেড়ে কুল পাচ্ছি না।”
কেরানীগঞ্জের কদমতলী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক পীযূষ কুমার মালো বলেন, চুনকুটিয়ায় হাইওয়ে সড়ক দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে নামা ও ওঠার যে লেইন আছে, সকাল থেকে প্রচুর গাড়ি ওই লেন ধরে যাওয়া আসা করেছে। প্রথম ধাক্কা সামলানোর পর সকাল ১০টার দিকে গাড়ির চাপ একটু কমেছে। তবে যানজট হয়নি কোথাও।
ইদ্রিস মোল্লার বাড়ি গোপালগঞ্জে, বয়স ৬০ বছর। ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনিকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বাস ধরতে সকালে তিনি এসেছিলেন ফুলবাড়িয়ায়।
পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে যাবেন? প্রশ্ন করতেই ইদ্রিস মোল্লার মুখে খেলে গেল তৃপ্তির হাসি। বললেন, “অনেক কষ্ট করছি জীবনে। কোনোবার ঈদের দিন শেষ হয়ে গেছে পদ্মার চরে। নাতি-নাতনির আর সেই কষ্ট হবে না, এইটাই আনন্দ।”
এক যুবক মোটরসাইকেলের চাকা আর ভারী ব্যাগ তুলছিলেন বাসের বাক্সে। নাম বললেন নরীন দত্ত। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে বললেন, “যাচ্ছি স্বপ্ন দেখতে।”
সকাল থেকে ফুলবাড়িয়ায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. মাসুম। তিনি বললেন, ভোর থেকে এ এলাকায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়, বেশিরভাগই যাচ্ছেন পদ্মাসেতু দেখতে।
“এক মুহূর্ত অবসর পাচ্ছি না। এত গাড়ি যাচ্ছে, সব সামলে বের করে দিচ্ছি।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ মুনিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। রোববার অফিস খোলাসহ একটা চাপ থাকে। তাছাড়া পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে আসা কিছু গাড়ি ঢাকায় ঢুকছে, কিছু ফ্লাইওভার ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম রোডের দিকে চলে যাচ্ছে।”
তার ভাষায়, সকালে অফিস আদালত খোলার সময়টায় সেতু হয়ে আসা গাড়ি বাড়ায় চাপ বেশি মনে হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
চট্টগ্রাম বা সিলেটগামী যানবাহনও ঢাকার যাত্রাবাড়ী হয়েই যায়। ঢাকাকে এড়িয়ে যাওয়ার পথ না থাকায় রাজধানীর ওপর যে যানবাহনের চাপ বাড়বে, সে বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের ভাষ্য, এতদিন পদ্মা পার হতে হত ফেরিতে। তাতে কিছু সময়ক্ষেপণ হত। ফলে এক সঙ্গে অনেক গাড়ি ঢাকায় প্রবেশের সুযোগ ছিল না।
কিন্তু সেতু চালু হলে দক্ষিণবঙ্গের গাড়ি দ্রুতই ঢাকা চলে আসবে। পদ্মা সেতু থেকে নেমে বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে ঢাকার সড়কগুলোকেই। একইভাবে বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ঢাকার ওপর দিয়েই পদ্মা সেতুর দিকে যাবে গাড়ি।
তাতে ঢাকার প্রবেশ পথ, বিশেষ করে বাবু বাজার ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, মুন্সীগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জগামী রাস্তা, পোস্তগোলা থেকে নারায়নগঞ্জে যাওয়ার রাস্তায় যানজট বাড়বে।
সেতু উদ্বোধনের আগে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, "অনেক গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করবে, বের হবে, সেখানে ঢাকায় চাপ একটু হবেই, সেটা মোকাবেলার পরিকল্পনা আমাদের আছে। আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে আমরা এগোচ্ছি।"