পদ্মা সেতু করতে গিয়ে যে ‘মানসিক যন্ত্রণা’ সইতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে

নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এই সেতু করতে গিয়ে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের যে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল, তা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2022, 11:54 AM
Updated : 25 June 2022, 11:55 AM

বন্ধুর পথ পেরিয়ে নির্মিত দেশের দীর্ঘতম সেতুটি শনিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী; এরপর জাজিরা প্রান্তে এক জনসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “একটা কথা মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবনটা দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়েছেন আমার মা-ভাইয়েরা। আমি আর আমার বোন বেঁচে আছি।

“আমাদেরকে এই পদ্মা সেতু করতে যেয়ে অনেক অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

এক দশক আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের শুরুতে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরে যায়। সেই অভিযোগকে ভিত্তি ধরে সমালোচনা হয় সরকারের; যদিও পরে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়নি। কানাডার আদালতেও এই সংক্রান্ত মামলাটি প্রমাণ করা যায়নি।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের সঙ্গে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পৃক্ততার কথাও এদিন সেতুর মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে ওই ব্যাংকের অ্যাডভাইজার এমিরেটাস পদে থাকার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তিনি ক্ষেপে যান। সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে, অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেও হেরে যান।

“এরপর আমরা দেখলাম বিশ্ব ব্যাংক আমাদের অর্থ বন্ধ করে দিল দুর্নীতির অভিযোগ এনে। বিষয়টি নিয়ে অনেক পানি ঘোলা করা হয়েছে, অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকজন অর্থনীতিবিদসহ কয়েকজন।”

জাজিরার জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, “আমার ছেলে জয়, মেয়ে পুতুল, রেহানার ছেলে ববিকে কত মানসিক যন্ত্রণা তারা দিয়েছে। কিন্তু আমরা পিছু হটি নাই।

“আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, এই সেতু নির্মাণ করব, আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমরা করব, আমরা তা করতে পেরেছি। সেই সাহস দিয়েছেন আপনারা, শক্তি দিয়েছেন আপনারা। আমি আপনাদের পাশে আছি।”

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ দিয়ে অপমানিত করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জনগণের জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ।

“আপনাদের পাশেই আমি আছি। আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে সদা প্রস্তুত। এই ওয়াদা আমি দিয়ে গেলাম। আমি আপনাদের জন্যই প্রয়োজনে আমার নিজের জীবনটা দেব।”

জনসভায় বক্তব্যের শেষে উপস্থিত জনসাধারণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি, দেবার কিছু নাই। আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।”