‘মাথা নোয়াবার নয়’ থিম সংয়ে শুরু পদ্মাপাড়ের উৎসব

প্রমত্তা পদ্মার বুকে বাঙালির স্বপ্নপূরণের উৎসব শুরু হয়েছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায়; সেখানে আয়োজিত সুধী সমাবেশে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2022, 04:22 AM
Updated : 25 June 2022, 10:56 AM

দেশের সবচেয়ে বড় এ যোগাযোগ অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে পদ্মার দুই তীরের পাশাপাশি সারা দেশেই চলছে উৎসব। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হয়ে ঠিক ১০টায় মাওয়ায় আয়োজিত সুধী সমাবেশের মঞ্চে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। 

এ অনুষ্ঠানে দেশের সবচেয়ে বড় এ যোগাযোগ অবকাঠামোর উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী টোল দিয়ে সেতু পেরিয়ে যাবেন ওপারে, শরীয়তপুরের জাজিরায়। পরে মাদারীপুরের বাংলাবাজারে অংশ নেবেন আওয়ামী লীগ আয়োজিত লাখো মানুষের জনসভায়। রোববার পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে চলাচলের জন্য।

প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে সেতুর টোল প্লাজার কিছুটা আগে এক পাশে অস্থায়ী প্যান্ডেল করে। সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা সুধী সমাবেশ স্থলে পৌঁছেছেন আগেই। 

মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর এক পাশে আছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, অন্যপাশে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আর তার পাশে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

মঞ্চের দুই পাশে দুটো ডায়াস আর তার দুটো জায়ান্ট স্ক্রিন। এক পাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, অন্য পাশে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।

তাদের মধ্যে আছেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন, ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে পদ্মা সেতুর থিম সং ‘মাথা নোয়াবার নয়, বাঙ্গালি যেহেতু; বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ, তুমি দিলে পদ্মা সেতু’ বাজিয়ে সুধী সমাবেশ শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এরপর পদ্মা সেতু গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট এবং বন্ধুর পথ পরিক্রমা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। তারপর বক্তৃতা দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  

সেতুর উদ্বোধন ঘোষণার পর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন সরকারপ্রধান। তারপর টোল দিয়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু দিয়ে পদ্মা পার হয়ে যাবেন শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে।

সেখানে তিনি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন। দুটো ভলবো বাসে করে ঢাকা থেকে আসা সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর বহরের সঙ্গে পদ্মা সেতু পার হবেন।

এরপর পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুরের বাংলাবাজারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। যেখানে ১০ লাখ লোক জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকেও বাস, আর লঞ্চে করে মানুষ সেখানে আসছে সকাল থেকে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে সাজানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার-ফেস্টুনে। মাওয়ায় যে সুধী সমাবেশ হবে, তা মূলত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। আর নদীর ওপারে যে বিশাল জনসভার আয়োজন হয়েছে, তা হবে দলীয় উদযাপন।

তাতে যোগ দিতে দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হচ্ছেন পদ্মাপাড়ে। তাদের সঙ্গে আসছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। কোনো অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে এত বড় উৎসব, এত বড় আয়োজন আর কখনও বাংলাদেশ দেখেনি। 

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে হাজার হাজার ফেস্টুনে ভরে গেছে। টোল প্লাজা থেকে পাঁচ্চর পর্যন্ত পদ্মাসেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কে দেড় ডজন তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

এ স্বপ্ন বোনার শুরুটা হয়েছিল দুই যুগ আগে; এরপর বহু পরিকল্পনা, শ্রম আর তিতিক্ষা, অনেক বিতর্ক, টানাপড়েন আর অপপ্রচার, দীর্ঘ চ্যালেঞ্জ আর প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব।

এই সেতু যে কেবল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে- তাই না, পুরো দেশের সামনে খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার, যে পথ ধরে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন