ঢাকার বৃহত্তম এ টার্মিনাল থেকে যাত্রী পরিবহনকারী বিভিন্ন কোম্পানির বাসের রুট পারমিট এখন পাটুরিয়া ঘাট হয়ে যাতায়াতের। বিআরটিএ বলছে, রুট পারমিট ছাড়া কোনো বাস পদ্মা সেতু হয়ে যেতে পারবে না।
তবে রুট পারমিটের অনুমোদন চাইলে তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, সেজন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চলাচলে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ইতোমধ্যে নতুন ১৩টি রুট নির্ধারণ করে বাসের ভাড়াও ঠিক করে দিয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এসব রুটের ভাড়া নির্ধারণ করে ৭ জুন সংস্থাটির দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার সায়েদাবাদকে বাস চলাচলে শুরুর স্টেশন ধরা হয়েছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতকারী বাসগুলো সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যাবে। গাবতলী থেকে যেসব বাস চলে সেগুলো শহরে আসতে পারবে না।
গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে চলাচলকারী বাসের তত্ত্বাবধান করে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের হিসাবে গাবতলী টার্মিনাল থেকে প্রায় এক হাজার ২০০ এর মত বাস চলাচল করে। এরমধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা প্রায় ৬০০টি।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারাও চাচ্ছেন গাবতলীর কিছু গাড়ি পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করুক। এজন্য বিআরটিএর কাছে লিখিত দেওয়া হয়েছে।
“আমাদের গাড়িগুলোর রুট পারমিট নেওয়া আছে পাটুরিয়া হয়ে। এজন্য আমরা আবেদন করেছিলাম লিখিতভাবে, যেন কোনোভাবে আমাদের গাড়িগুলো পদ্মা সেতু হয়ে যেতে দেয়। তা না হলে রাতে ঢাকা শহরের ভেতর দিয়ে চলাচলের অনুমতি দেয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। পারমিশন দেয় নাই, আমরা কিভাবে গাড়ি চালাব?”
এসব জেলায় যাতায়াতকারী বেশিরভাগ পরিবহনের বাস এখন চলছে গাবতলী টার্মিনাল থেকে।
আবার দূরত্ব বিবেচনায় সায়েদাবাদ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল ও রাজবাড়ী জেলায় বাস চলাচলের রুট করা হয়নি।
বর্তমানে সাকুরা পরিবহন গাবতলী থেকে বরিশাল রুটে সবচেয়ে বেশি বাস পরিচালনা করে। এ কোম্পানির গাবতলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক নাজির আহমেদ জানান, তাদের গাড়িগুলো পাটুরিয়া হয়েই চলবে। পদ্মা সেতু চালু হলেও রুট বদলের কোনো নির্দেশনা তারা পাননি।
“শহরের ভেতর দিয়ে বাস যেতে দেবে না। আর আমাদের রুট পারমিট নাই ওই দিক দিয়ে। আপাতত এইদিক দিয়েই আমাদের গাড়ি চলবে। সায়েদাবাদ থেকে রুট পারমিট নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে শুনেছি।”
শ্যামলী এন আর পরিবহনের মালিক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পদ্মা সেতু পুরো বাংলাদেশের আবেগের সেতু। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আবেগ অনেক বেশি। তবে সেখানে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
আপাতত বেড়িবাঁধ সড়ক ব্যবহার করে পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযোগের জন্য তাদের পক্ষ থেকে বলা হলেও সাড়া মেলেনি বলে জানান তিনি।
সেতু ব্যবহার করে বাস চলাচলে অনুমতি পাওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমিন উল্লাহ বলেন, “বাসের মালিকরা আমাদের কাছে রুট পারমিট চাইতে হবে। তাদের রুট পারমিট আছে পাটুরিয়া হয়ে। ঢাকা শহরে দিনের বেলায় বাস চলবে না।
“আমাদের বললে আমরা দিয়ে দিব। আমরা প্রস্তুত, রুট পারমিট চেঞ্জ করে আসতে হবে।”
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হল শনিবার; সেতু এলাকা উৎসবের রঙে সেজেছে; সাজ সাজ রব পড়েছে সেখানে।
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করেন। রোববার থেকে এ সেতু দিয়ে গাড়ি চলবে; পুরো দেশের সড়ক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক আরও সহজ, দ্রুততর হবে।
আরও পড়ুন