প্রিয় নুরপুর গ্রামেই চিরঘুমে কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ

বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে রাষ্ট্রীয় সম্মান নিয়ে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার নুরপুর গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একাত্তরের নির্ভীক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2022, 05:43 PM
Updated : 21 June 2022, 05:43 PM

মঙ্গলবার আসর নামাজের পর নুরপুর ঈদগাহ ময়দানে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এই সচিবকে দাফন করা হয়।

মহিউদ্দিন আহমদের ভাই জিয়াউদ্দিন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দাফনে আগে ঈদগাহ ময়দানে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ফুলগাজীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুন নাহার।

মহিউদ্দিন আহমদের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে নিজ গ্রাম নূরপুরে দাফন করা হয় বলে জানান তার ভাই।

সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরার বাসা শিউলিতলায় মারা যান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে প্রবাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দেওয়া কূটনীতিক মহিউদ্দিন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

তিনি লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তিন সপ্তাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর চারদিন আগে মহিউদ্দিন আহমদকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল বলে তার ভাই জানান।

মঙ্গলবার সকালে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদে মহিউদ্দিন আহমদের জানাজা হয়। সকালে তার কফিন নেওয়া হয় দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে।

সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিকরা তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরে মরদেহ নেওয়া হয় নুরপুরে।

মহিউদ্দিন আহমদের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৯ জুন, ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার নুরপুর গ্রামে। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৭ সালে তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগ দেন।

একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে লন্ডনে তৎকালীন পাকিস্তান হাই কমিশনে কর্মরত ছিলেন মহিউদ্দিন। ১ অগাস্ট ট্রাফালগার স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক সমাবেশে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করার ঘোষণা দেন।

ইউরোপের দেশগুলোতে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকদের মধ্যে তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের কাজে যোগ দিয়েছিলেন।

পেশাদার কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমদের চাকরিজীবন কেটেছে নানা উত্থান পতনে। এইচএম এরশাদ সরকারের সময়ে তাকে পাঠানো হয়েছিল অন্য মন্ত্রণালয়ে। বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখার ‘অপরাধে’ বিএনপি সরকার করেছিল চাকরিচ্যুত। পরে শেখ হাসিনা সরকারে এসে মহিউদ্দিন আহমদকে চাকরিতে ফেরান, সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেন।

২০০১ সালের জানুয়ারিতে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান মহিউদ্দিন আহমদ। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, দারিদ্র্য, উন্নয়ন প্রভৃতি নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে নিয়মিত কলাম লিখেছেন।