র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ বিস্ময় প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্র অবাক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
Published : 18 Jun 2022, 01:08 AM
তিনি জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে টানা বেশ কয়েক বছর ধরে উদ্বেগ প্রকাশের পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেইসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পিটার।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা গত ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। এবং তারপর অনেকবার শুনেছি যে, বাংলাদেশ এতে কত অবাক হয়েছে এবং সম্ভবত আমরাও প্রায় বিস্মিত তাদের বিস্ময় দেখে।
“কারণ, ২০১৮ সালেই আমরা প্রশিক্ষণ দেওয়া বন্ধ করেছিলাম র্যাবকে, কারণ মানবাধিকার নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা আমাদের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও এটি তুলে ধরেছি। ফলে নিষেধাজ্ঞাটা বিস্ময় হিসেবে এলেও কিন্তু আমাদের যে উদ্বেগ ছিল, সেটি নিয়ে বিস্ময় থাকার কথা নয়।”
গত বছর ১০ ডিসেম্বর ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় চলমান অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়গুলো মানুষ ভুলে যাচ্ছে মন্তব্য করে পিটার হাস বলেন, “কিন্তু আমরা সব ধরনের বিষয়ে সহযোগিতা করি।
“আইনপ্রয়োগ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। এবং এসব বিষয়ে আমাদের খুব গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও আমরা বিচার বিভাগ ও আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দিই।
“আর পুলিশের জন্যও আমাদের অনেক প্রশিক্ষণ রয়েছে। আমরা এই যে এত প্রশিক্ষণ ও অংশীদারিত্ব করছি, সামনে তা চালিয়ে যেতে এবং আরও গভীর করতে আমরা খুবই আগ্রহী।”
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলেও মনে করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, “অনেকে আমাদের জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি মনে করি কি না এতে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং আমি শুধু তাদেরকে বলি এমন হতে হবে তা আমি মনে করি না।
পিটার হাস বলেন, “আমাদের এই সম্পর্কে অন্য দ্বন্দ্বও রয়েছে। এত গভীর ও বিস্তৃত সম্পর্কের মধ্যে এটা থাকাটাই স্বাভাবিক, যেমনটা আমাদের আছে।
“কিন্তু আমি আমাদের উভয়কে যা করতে দেখতে চাই, র্যাবসহ অন্য প্রতিটি বিষয়ে, তা হল একসঙ্গে বসা ও কথা বলা। আচ্ছা, এই ইস্যুটি সমাধানের জন্য আমাদের কী করতে হবে?
“সেখানে হয়তো আমরা আমাদের চাওয়াটা বললাম এবং বাংলাদেশ সরকার বলল যে, না আমরা এটি করতে পারব না। সার্বভৌম দেশ হিসাবে তা-ও ঠিক আছে। তারপর আমরা এগিয়ে যাব।
“এবং এমনও বিষয় আছে যেখান আমরা কিছু চাই, তারা বলবে, না আমরা এটা করতে পারব না। এবং তারপর আমরা এগিয়ে যাব। আমার মনে হয় এটা ঠিকই আছে।”
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেইসবুক পেইজে ‘অ্যামটক’ নামে এ আলোচনার প্রথম পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নে উত্তর দেন পিটার হাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দূতাবাসের মুখপাত্র কার্লা থমাস।
এক প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কিছু ঘাটতির কথা স্বীকার করেন তিনি। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে শত শত মামলার কথাও আসে তার কথায়।
গণতন্ত্রের উন্নয়নে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার কাজ করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি এটা স্পষ্ট করতে চাই যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পছন্দ নেই। আমাদের কোনো ভোট নেই।
“আমরা কোনো দল বা প্ল্যাটফর্ম বা কোনো কিছুরই পক্ষ নিই না। সেটি আমাদের ভূমিকা নয়।”
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে পিটার বলেন, “আমরা যা দেখতে চাই, তা মনে হয় বাংলাদেশের সব মানুষই দেখতে চান।
“তা হল, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচন, যেখানে বাংলাদেশের মানুষ তাদের পরবর্তী নেতাদের বেছে নিতে পারবে একটি অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক, সহিংসতাহীন ও দমনপীড়নমুক্ত প্রক্রিয়ায়।”
‘শুনতে খুব সহজ হলেও বাস্তবে তা নয়’ মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা ঠিক এই জিনিসটাই খুব করে দেখতে চাই। এবং আমি স্বাগত জানাই তেমন কিছু ইংগিতকে, কিছু সংকেতকে, যেগুলো আমরা পাচ্ছি।”
নির্বাচনের সময় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের আশ্বাসের কথা উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, “নির্বাচন আসলে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
“ফলে এটা দেখা জরুরি, যেন সবাই এখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করে যে, আগামী নির্বাচনের কোনো পর্যায়ে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে কি থাকবে না।”
আরও খবর