পদ্মা সেতুর উদ্বোধন বানচালে ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে: শেখ হাসিনা

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোসহ দেশে সাম্প্রতিক বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি মহল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বন্ধের ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2022, 11:03 AM
Updated : 15 June 2022, 11:08 AM

এ বিষয়ে তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ এবং আইশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অনান্য বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্তক থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকার বিষয়টি কয়েকবার এসেছে শেখ হাসিনার বক্তব্যে।

তিনি বলেন, “আপনাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ... যারা এর বিরোধিতা করেছিল, তাদের কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে; কিছু কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে, যেন ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতেই না পারি। কী করবে তা জানি না।“

সীতাকুণ্ডের ডিপো ছাড়াও পরাবত এক্সপ্রেস ট্রেন এবং পদ্মায় ফেরিতে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিক্ষিপ্ত বিক্ষিপ্ত কয়েকটা জায়গায় একসাথে আগুন ধরে কীভাবে?

“আর রেলের আগুনটা… এটা কিন্তু আমরা একটা ভিডিও পেয়েছি নিচের দিক থেকে, রেলের চাকার কাছ থেকে আগুন জ্বলছে। এটা কী করে হয়? এই সমস্ত জিনিসগুলো রহস্যজনক।”

সেজন্য সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ‘স্থাপনাগুলোর’ দিকে সবাইকে নজর রাখার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে হওয়া ‘অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের’ কথা তুলে ধরে এর পেছনে মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ টানেন।

“ড. ইউনূসের প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক আমাদের টাকাটা (পদ্মা সেতু নির্মাণে তহবিল) বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি তখন ঘোষণা দিয়েছিলাম পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করব…।কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা কিন্তু সেটা করে ফেলেছি।

“এক্ষেত্রে আমি বলব, যেহেতু এখানে আমাদের পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি সবাই উপস্থিত…সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে।“

সরকারের নেওয়া মেগাপ্রকল্পগুলোর মধ্যে হাইটেক পার্ক, ইনকিউভেটরের নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া, পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সংশ্লিষ্টদের তৎপর হতে নির্দেশ দেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, “এখানে আমাদের বাহিনীর প্রধানরা যারা আছেন, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী আছে এখানে, অন্যান্য বাহিনী আছেন। আমাদের এই ব্যাপারে আরো উদ্যোগ নিতে হবে যে কীভাবে আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা বিধান করতে পারি।“

প্রযুক্তি ব্যবহারে অপকর্ম বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন,‌“প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। আবার যারা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত, তাদেরও কিন্তু সুযোগ করে দেয়। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।“

“প্রযুক্তি যেমন আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ এনে দেয়, তেমনি এই প্রযুক্তিই ধ্বংসাত্মক কাজের ধরনটা বদলে দেয়। সবকিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।”

সেভাবেই এসএসএফের উন্নয়ন ঘটানোর কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা আমাদের এসএসএফকে যতটুকু পারি যথেষ্ট শক্তিশালী করেছি, অন্যান্য বাহিনীগুলোর জন্য আমরা করে দিতে চাচ্ছি।”

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আল্লাহর রহমতে আমি বলব আমাদের প্রত্যেকটা বাহিনী এত সজাগ, সচেতন, যে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল তারপর থেকে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের প্রত্যেকটা বাহিনী সেনা-নৌ-বিমান বাহিনী পুলিশ বাহিনী র‌্যাব বা আনসার ভিডিপি আমাদের বিজিবি প্রত্যেকেই কিন্তু দায়িত্ব পালন করেছে।যার ফলে…।

“মনে রাখতে হবে, যখনই আমরা এগিয়ে যাই, তখনই কিন্তু নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা কোনো কোনো মহল করে থাকে।”

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।