কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণ ভোট শেষে ফলের অপেক্ষা

বৃষ্টি ছাড়া ঝামেলা করেনি আর কেউ, কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রথম পরীক্ষায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2022, 10:20 AM
Updated : 15 June 2022, 12:15 PM

ভোটের আগে কথার লড়াই উত্তাপ ছড়ালেও বুধবার ভোটের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বড় ধরনের অভিযোগ ছিল না। ভোটার উপস্থিতি নিয়েও মোটামুটি সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন।

ইভিএমের এ নির্বাচনে শুধু কিছু কেন্দ্রে ধীরগতিতে ভোট হওয়ায় দুর্ভোগের কথা এসেছে। তবে কোথাও বড় কোনো গোলযোগ, মারামারি হয়নি। ভোটের পরিবেশ নিয়ে বড় কোনো প্রশ্নের মুখে ইসিকে পড়তে হয়নি।

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলেছে। ওই সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের নির্ধারিত চৌহদ্দীর মধ্যে যারা ঢুকেছেন, নিয়ম অনুযায়ী তাদের সবারই ভোট নেওয়া হবে।

ইভিএমে ভোট হওয়ায় গণনার কোনো ঝামেলা নেই। ভোট শেষে সামান্য বিরতি দিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা করা হবে। পরে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে একীভূত ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

সকালের শুরুটা ভালোই ছিল। সোয়া দুই লাখের বেশি ভোটারের এ নগরে সকাল ৮টার আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে জমে উঠছিল ভোটের লাইন, কিন্তু ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাতে বাগড়া দেয় বৃষ্টি।

সকাল ৯টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে মাঠের লাইন ভেঙে ভোটাররা আশ্রয় নেন কেন্দ্রের বারান্দায়। কোথাও আবার লাইনে দাঁড়িয়েই ভিজতে দেখা যায় ভোটারদের।

ওই সময়টায় অনেকে ভোট না দিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অনেকে আবার ছাতা মাথায় দিয়ে ঠিকই কেন্দ্রে এসেছেন ভোট দিতে।

কুমিল্লার ভোট : এক নজরে

>> ভোটার: ২,২৯,৯২০ জন (পুরুষ ১,১২,৮২৬; নারী ১,১৭,০৯২ ও হিজড়া ২)

>> ওয়ার্ড: সাধারণ ২৭, সংরক্ষিত ৯

>> ভোট কেন্দ্র: ১০৫

>> ভোট কক্ষ: ৬৪০।

>> আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- ৩ হাজার ৬০৮

>> ৭৫টি চেকপোস্ট, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, ৩০টি র‍্যাবের টিম, অর্ধশতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নয়জন বিচারিক হাকিম।

>> প্রার্থী: মেয়র ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ১০৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৩৬ জন।

মেয়র প্রার্থীরা

>> রাশেদুল ইসলাম- ইসলামী আন্দোলন (হাতপাখা)

>> কামরুল আহসান বাবুল- স্বতন্ত্র (হরিণ)

>> মো. মনিরুল হক সাক্কু- স্বতন্ত্র (টেবিল ঘড়ি)

>> নিজাম উদ্দিন কায়সার- স্বতন্ত্র (ঘোড়া)

>> আরফানুল হক রিফাত- আওয়ামী লীগ (নৌকা)

বৃষ্টির ওই বিপত্তি পেরিয়ে বেলা ১১টার পর আবার ভিড় বাড়ে ভোটকেন্দ্রে। ওই সময় পর্যন্ত ২০ শতাংশ ভোট পড়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।

ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার দুপুরে বলেন, “আমরা আশা করছি, নট লেস দ্যান ৬০%। কারণ, আমরা ভোট দেওয়ার জন্য পরিবেশটা সৃষ্টি করেছি।”

সকাল ১০টার দিকে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি, সবাই সুন্দরভাবে ভোট দিচ্ছেন। বৃষ্টি আসার কারণে ভোটার উপস্থিতি একটু কম আছে।”

তবে ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারেন, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।

নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মধ্যে বুধবারই প্রথম ভোট হল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সঙ্গে পাঁচ পৌরসভা, ১৩০টি ইউপি ও এক উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে এদিন। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় আলোচনায় ছিল কুমিল্লাই।

মেয়র পদের পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আলোচনা ছিল মূলত তিনজনকে ঘিরে। গত দুইবারের মেয়র বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারও নজর কেড়েছেন।

সকালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নৌকার প্রার্থী রিফাত নিজের জয়ের ব্যাপারে ‘শতভাগ আশাবাদ’ ব্যক্ত করেন।

একই কেন্দ্রে ভোট দেন ঘোড়া মার্কার প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। ইভিএমে ভোট প্রয়োগে ‘বয়স্কদের জন্য সমস্যা’ হয় এবং ভোটের গতি ‘স্লথ’ হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পরে হোচ্চা মিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাক্কু বলেন, “সবকিছু ঠিক আছে। শুধু ইভিএম পদ্ধতিতে একটু ক্রুটি হচ্ছে, এইডাই কথা, অন্য কিছু না।”

মেয়র পদে এই ৫ জন বাদে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এ নির্বাচনে।

চল্লিশটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকা ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের চোখে কোনো বিশৃঙ্খলা বা গণ্ডগোল ধরা পড়েনি। ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধাদানের অভিযোগে আমরা পাইনি।

“কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। পাঁচটি সংগঠন চল্লিশটি ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছে। দুপুর পর্যন্ত ৩০-৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।”

আবেদ আলী বলেন, “বোঝা যাচ্ছে, ভোটের প্রতি ভোটারদের আগ্রহ বেড়েছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। ভোটাররা ছিলেন খুবই আন্তরিক। তবে ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীর গতির অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। এতে ভোটাররা কষ্ট পাচ্ছেন।”

তার মতে, ভোটের আগে ভোটদানের বিষয়ে যে প্রচার প্রয়োজন ছিল, তা যথেষ্ট ছিল না। সাধারণ ভোটাররা ইভিএমের সাথে আগে পরিচিত হতে পারেননি। অনেককে ভোট দিতে গিয়ে দুই তিনবার চেষ্টা করতে হয়েছে।

এবারই প্রথম নির্বাচনী এলাকার সব কেন্দ্র ও ভোট কক্ষে ছিল সিসি ক্যামেরা। ঢাকায় ইসি সচিবালয় থেকে এবং কুমিল্লায় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে সেসব ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হয় ভোট পরিস্থিতি।

কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা না ঘটায় কুমিল্লায় ভোট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছেন, কুমিল্লা ‘খুব ভালো নির্বাচনের একটি উদাহরণ’ হবে বলে তিনি আশা করছেন।