দুদকের মামলায় সাহেদসহ স্বাস্থ্যের আজাদের বিচার শুরু

লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে ‘সরকারি অর্থ আত্মসাতের’ মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদ এবং রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদসহ ৬ জনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2022, 08:16 AM
Updated : 12 June 2022, 08:46 AM

ঢাকার ষষ্ঠ বিশেষ জজ আদালদের বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান রোববার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ৪ জুলাই দিন ঠিক করে দিয়েছেন।

অভিযোগ গঠনের শুনানিতে আসামিদের অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তারা নিজেদের নিদোষ দাবী করে ন্যায়বিচার চান। আসামিদের পক্ষে অব্যাহতির আবেদন করা হলেও বিচারক তা নাকচ করে দেন।

আবুল কালাম আজাদ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, “আমিতো কোনো দোষ করিনি, তাহলে অভিযোগ গঠন করা হবে কেন?”

রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর তখন বলেন, “এটা আইনের প্রসিডিওর। মামলায় সাক্ষ্য হবে, তারপর রায় হবে।”

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক ডা. মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে সাহেদ কারাগারে এবং বাকিরা জামিনে আছেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মামলাটি বিচারের জন্য ৬ নম্বর আদালতে স্থানান্তরের আদেশ দেন।

গত বছর আজাদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।

সেখানে আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাইসেন্সের মেয়াদবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করার অভিযোগ আনা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে মোট ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। সেখানে আবুল কালাম আজাদকে আসামি করা না হলেও তদন্তে নাম আসায় চার্জশিটে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কোভিড- ১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ২০২০ সালের ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন সচিব উপস্থিত ছিলেন।

তিন মাস না যেতেই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে রিজেন্টের বিরুদ্ধে। এরপর গত বছর ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় র‌্যাব।

তখন জানা যায়, চুক্তি হওয়ার বহু আগে ২০১৭ সালেই হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ওই হাসপাতালের অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য বিভাগ।

২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদে ছিলেন ডা. আজাদ। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পরও তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে ওই পদে রেখেছিল সরকার।

কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ হতে থাকলে বিপাকে পড়তে হয় ডা. আজাদকে। মাস্ক কেলেঙ্কারির পর করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণ ও জালিয়াতির খবর ফাঁস হলে তিনি তোপের মুখে পড়েন। এরপর গতবছরের ২১ জুলাই তিনি পদত্যাগপত্র দেন।

তার আগে ২০২০ সালের ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, অনিয়মের নানা অভিযোগ তখন সামনে আসতে থাকে। 

রিজেন্টের চুক্তি নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ওই বছর ১২ ও ১৩ অগাস্ট আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সে সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “কেউ অপরাধ করলে তার কঠোর শাস্তি হোক এটা আমি চাই, এ বিষয়ে তদন্তে আমি প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করব।”

পুরনো খবর