এই পদ্মা সেতু অপমানের প্রতিশোধ: শেখ হাসিনা

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করে ফেলাকে অপমানের প্রতিশোধ হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2022, 07:29 PM
Updated : 9 June 2022, 03:37 AM

বুধবার সংসদে তিনি বলেছেন, “পদ্মা সেতু আমাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে। পদ্মা সেতু সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক এবং অপমানের প্রতিশোধ। এই সেতু শুধু সেতু নয়, এটি প্রকৌশলজগতে এক বিস্ময়।

“এই একটা সিদ্ধান্ত। যখন আমরা সেতু করতে শুরু করলাম, সবার টনক নড়লো। সবাই সমীহ করতে শুরু করল যে না বাংলাদেশ পারে। এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে।”

দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর কাজ এক দশক আগে শুরুর সময় এই প্রকল্পে যুক্ত ছিল বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা।

তখন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। টানাপড়েনের এক পর্যায়ে তাদের বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।

নির্মাণ কাজ শেষে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে পদ্মা সেতু। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে বুধবার সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন হয়।

প্রধান হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীর উত্থাপিত এই প্রস্তাবের উপর আলোচনা করেন সরকারি ও বিরোধী দলের ৩৮ জন সদস্য। শেষে প্রস্তাবটি সর্বসস্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।

সেই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধসহ নানা ঘটনা তুলে ধরেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমি বলেছি, যেদিন নিজের টাকায় করতে পারব সেদিন করব।

“কিন্তু আমার দেশকে অপমান করে টাকা নিয়ে করতে হবে! আমাকে ভয় দেখানো হয়েছে যদি এটা না হয় আপনার ইলেকশনের কী হবে? আমার কথা, জনগণ ভোট দেবে না, ক্ষমতায় আসব  না। ২০০১ সালে তো আমাকে আসতে দেওয়া হয়নি।”

নিজের পরিবারের উপর চাপ আসার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “একটি মানসিক যন্ত্রণা আমার পরিবারের ওপরে। আমার মেয়েটাকে, আমার ছেলে, আমার বোন। তাদের ওপর যে মানসিক চাপ! জয়কে নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে- তোমার মাকে বলো, না হলে তোমার বিরুদ্ধে অডিট হবে। সে বলেছিল- হ্যাঁ করো, আমার মাকে এটা বলতে পারব না, আমার বিরুদ্ধে যত এনকোয়ারি আছে করতে পারে, আমি এখানে কোনো অন্যায় করিনি, আমার সবকিছু লিগ্যাল, আমি কোনো ভয় পাই না।

“কাকে না তারা চাপ দিয়েছে। শুধু আমার ওপরে? সবার ওপরে। এ রকম অবস্থাতে আমি কিন্তু দমে যাইনি। সততা আমার শক্তি। আমার শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। এই জনগণকে অপমান করে কোনো কিছু করব? এটা নয়।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা গত ৩১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু ঘুরে আসেন। ফাইল ছবি

পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের শর্তে বিশ্ব ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাপক চাপ’ থাকার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এত চাপ! এই মামলা, যে সমস্ত খেলা। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি। এই যে অপমান! স্টেট ডিপার্টমেন্ট দুই দুই বার আমার ছেলেকে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ডেকে নিয়ে থ্রেট করেছে যে তোমার মাকে বলো-এমডির পদ থেকে ইউনূসকে সরানো যাবে না।

“গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ড. ইউনূস বেআইনিভাবে ৭১ বছর পর্যন্ত এমডি পদে ছিল। তাকে কোনো অপমান করা হয়নি বরং তাকে ব্যাংকের উপদেষ্টা ইমেরেটাস হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাকে এমডি থাকতে হবে!

“এই যে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করা। আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু এই ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দিয়ে তো এটা করানো হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তার শেষ কর্মদিবসে এটার টাকা বন্ধ করে দিয়ে যায়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি, আমার বোন রেহানা, আমার ছেলে কেউ বাদ যায়নি। ড. মসিউর রহমান, আমাদের সচিব মোশাররফ, মন্ত্রী আবুল হোসেন এদের ওপর যে জুলুম তারা করেছে এবং যখন অসত্য অপবাদ দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিল, তখন আমরা বললাম, আমরা নিজের টাকায় করব।

“অনেকে বোধহয় ভেবেছিলেন এটা অস্বাভাবিক। কিন্তু আমি বলেছিলাম আমরা করতে পারব। এই আত্মবিশ্বাস আমার ছিল।”

আলোকিত হল পদ্মা সেতু; শনিবার সন্ধ্যায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১২ নম্বর স্প্যানে পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানো হয় বৈদ্যুতিক বাতি।

সেতু নির্মাণ শুরুর পরও দেশে নানা প্রশ্ন ওঠার বিষয়টি তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন নির্মাণ কাজ শুরু করি অনেক জ্ঞানীগুণী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারবে, কিন্তু সেতু সম্পন্ন করতে পারবে না। তাদের কেউ কেউ আমাদের সরকারের সাথেও ছিল। কত রকমের কথা এখানে শুনতে হয়েছে। রেললাইন কেন করলাম, সেটা নিয়েও আমাদের অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলেছেন। এই সেতুর দরকারটা কী ছিল, এই কথাটাও কেউ কেউ বলেন।

“আর এর একটাই কারণ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ছাড়া কিছু করা যাবে না। তাদের খবরদারি ছাড়া কোন কিছু হবে না। আর বাংলাদেশের কোনো উন্নতি হবে না। আমাকে এটাই বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে। আমি বলছি না, আমি মানি না। আমরা পারবো। আর যদি পারি করব, না পারলে করব না।”

৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই সেতুর সঙ্গে এখন বাংলাদেশকেও বিশ্বে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করিয়ে দেবে বলে আশাবাদী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যে নিজেরা পারে, এই ধারণাটা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

“এই সেতু শুধু সেতু নয়, এটি প্রকৌশল জগতে এক বিস্ময়। টেকনোলজি সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত কাজ করতে পারব।”