রাজাকারদের তালিকা: সংসদে নতুন বিল

রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরির বিধান রেখে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন নতুন করে প্রণয়নের প্রস্তাব সংসদে উঠেছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2022, 06:46 PM
Updated : 5 June 2022, 06:46 PM

রোববার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি সাত কার্যদিবসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলটি উত্থাপনের আপত্তি জানান বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি খসড়া আইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও বিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

বিলটিকে ‘অসম্পূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “যারা বিদেশে ছিল, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরও সনদ দেওয়া হচ্ছে; এটা বিব্রতকর।“

মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের ভূমিকা তুলে হারুন বলেন, তখন তার বয়স ছিল ১০ বছর। তিনিওতো দাবি করতে পারেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা। 

যদিও উত্থাপিত বিলে বলা আছে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইনের বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা এই আইনে গৃহীত হবে।

হারুনের আপত্তি জবাব দেন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। পরে স্পিকার হারুনের প্রস্তাব ভোটে দিলে তা নাকচ হয়ে যায়।

বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

বিলে বলা হয়েছে, “১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাহারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসাবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসাবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসাবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থাকিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিয়াছেন বা খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপ দ্বারা নিরীহ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করিয়াছেন অথবা একক বা যৌথ বা দলীয় সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যক্ষভাবে, সক্রিয়ভাবে বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিয়াছেন; তাহাদের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করবে।”

বিলে কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ১২ জন করা হয়েছে, যেখানে আগের আইনে (জামুকা আইন, ২০০২) ৯ জন ছিল। প্রস্তাব অনুযায়ী কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা হবেন প্রধানমন্ত্রী।

কাউন্সিলের আট জন সদস্য প্রদান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবেন, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হবে।

উপদেষ্টা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ফোর্স কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার অথবা কমান্ডারসমূহের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, এই বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবও এই পরিষদে থাকবেন।

কাউন্সিল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের নিবন্ধন প্রদান, সাময়িকভাবে স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে।

২০১৯ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিলের খসড়া তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সুপারিশও নেওয়া হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আইনের ভাষা পরিমার্জনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষে পাঠানো হয়।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুটি সংশোধনী দিয়ে ওই খসড়ার নীতিগত অনুমোদন করা হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা গত জুনে মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাঠানো হয়।

এ বছরের জানুয়ারি মাসে খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে ২০২০ সালে একটি উপ-কমিটি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করবে। পরে খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় যাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায়। গত এপ্রিল মাসে আগের কমিটি ভেঙে নতুন করে উপ-কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।