উন্নত জীবনের জন্যই ডেল্টা প্লান: প্রধানমন্ত্রী

সরকারের ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়নে বন্ধু দেশ ও উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করতেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2022, 12:48 PM
Updated : 26 May 2022, 01:00 PM

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন: সমস্যা ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ হল একটি ব-দ্বীপ, যেখানে সাতশ নদী এবং বিস্তীর্ণ নিচু জমি ও জলাভূমি রয়েছে এবং আমাদের এটিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা তথ্য-প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক একটি টেকনো-ইকোনমিক মহাপরিকল্পনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পরিকল্পনার পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নে ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে।

“ফলে অর্থায়ন থেকে শুরু করে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।”

জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখেই সরকার স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, যাতে বাংলাদেশকে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি। শুধু আজকের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মের জন্যও বাংলাদেশ যাতে টেকসই হয়, এর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যাতে অর্জন করা সম্ভব হয়।”

স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু ব-দ্বীপের সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতির পিতা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ভারতের সঙ্গে স্থায়ীভাবে একটি যৌথ নদী কমিশন গঠনে ইন্দিরা গান্ধীকে রাজি করান।

“ফলে ১৯৭২ সালের ১৯শে মার্চ ইন্দিরা গান্ধীর ঢাকা সফরকালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধার উন্নয়নে দু’দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের জন্য এবং সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় পাওয়ার গ্রিড স্থাপনের সম্ভাবতা যাচাইয়ের জন্য যৌথ ইশতেহার (১৪-ক) ঘোষণার মাধ্যমে যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয়।“

শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭৪ সালেই জাতির পিতা সমুদ্রসীমা আইন প্রণয়ন করেন। তখনও জাতিসংঘ সেই আইন করেনি। তারা করেছিল ১৯৮২ সালে। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক পর্যায়ে (জ্যামাইকার কিংস্টনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ সম্মেলনে) আলোচনা শুরু করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় ’৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অধিকার নিয়ে আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।”

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ওই বছরই ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে জানিয়ে তিনি বলেন, “ফলে ১৯৯৮ সালেই বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয় “

ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন, লবণাক্ততা, পাহাড়ধ্স ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত দুর্যোগ মোকাবেলার নীতিমালা আমরা অনুসরণ করে চলি।”

সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৮শ’ ২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি এবং সর্বোপরি ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনীতির গতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।”

বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ এবং বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এবং বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান গেরাড ফন লিউয়েন বক্তব্য রাখেন।