বৈষম্য বিরোধী বিলে পরিবর্তন ‘আসতে পারে’

সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংসদে ওঠা ‘বৈষম্য বিরোধী বিল’ এর বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে আরও আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন ‘আনা হতে পারে’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2022, 12:14 PM
Updated : 18 May 2022, 12:14 PM

বুধবার বিলটি নিয়ে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সদস্যদের দেওয়া বিভিন্ন প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়।

কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “সব প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করব। মনে হচ্ছে, কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।”

সব ধরনের বৈষম্য নিরোধে সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। গত ৫ এপ্রিল বিলটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে তা পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

কমিটির এক সদস্য জানান, বৈঠকে সদস্যরা বিলটি নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বৈষম্য হলে কোন আইনে বিচার হবে তা বিলে স্পষ্ট করা হয়নি। সর্বসাধারণের সংজ্ঞাও স্পষ্ট নয়।

দণ্ড কী হবে সে বিষয়ে সুনিদির্ষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। এছাড়া বৈষম্য প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধাপের কথা বলা হয়েছে। যেটা দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি করবে বলে অনেকে মতামত দিয়েছেন।

কমিটির সভাপতি বলেন, “বিলটির কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার বলে আমরা মনে করছি। আজকে দফাওয়ারি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আরও একটা বৈঠক করা লাগবে। ওই বৈঠকের পর বিলটির ওপর সুপারিশ চূড়ান্ত করব।”

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি প্রস্তাবিত আইনের ওপর কিছু বিষয় পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

রুমিন ফারহানা বলেন, “বৈষম্যের সংজ্ঞায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষ্যমের কথা আসেনি। তাছাড়া কোনো বৈষম্য করলে কী পরিমাণ জরিমানা হবে সেটা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।”

প্রস্তাবিত আইনে বৈষম্য নিরোধে যে মনিটরিং কমিটি গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে তা ‘আমলা নির্ভর’ বলেও অভিযোগ করেন একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে বিএনপি মনোনীত এ সদস্য।

বিলটি সংসদে ওঠার পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা- এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, খসড়া আইনটিতে ঘাটতি রয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, বৈষম্য নিরোধে একটি মনিটরিং কমিটি থাকবে, যার সভাপতি হবেন আইনমন্ত্রী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা তার মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর সদস্য হবেন।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশেনের সভাপতি, মানবাধিকার ও সমাজসেবায় জড়িত এমন সংগঠনের তিনজন, দুইজন শ্রমিক প্রতিনিধি- যার মধ্যে একজন চা শ্রমিক হবেন, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের চারজন প্রতিনিধি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি, দলিত সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি এর সদস্য হবেন।

এছাড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের একজন যুগ্মসচিব হবেন সদস্য সচিব। প্রতি তিন মাসে এই মনিটরিং কমিটিকে কমপক্ষে একটি বৈঠক করতে হবে।

লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের অধীনে একটি বৈষম্য বিরোধী সেল তৈরির বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী জাতীয় ও স্থানীয় কমিটি গঠনেরও সুযোগ রয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, কোনো বৈষম্যমূলক ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী বা ঘটনা সম্পর্কে ‘সম্যক জ্ঞাত’ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটিতে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন। জেলা কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করবে।

ঘটনা প্রমাণ হলে দায়ী ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। জেলা কমিটি প্রতিকার করতে না পারলে বিভাগীয় কমিটির কাছে অভিযোগ জানানো যাবে।

ওই কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে। না করলে অভিযোগকারী জাতীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। এই কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।

জাতীয় কমিটি যদি প্রতিকার করতে না পারে, তবে আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। বিলে বলা হয়েছে, দেওয়ানি কার্যবিধিতে যাই থাকুক না কেন, মামলা দায়েরের পর ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে।

প্রয়োজনে আরও ১৫ দিন সময় পাবে আদালত। আদালত যথাযথ প্রতিকারের আদেশ এবং প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানা আরোপ করতে পারবে বলে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে।

বৈঠকে আরও  অংশ নেন কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আব্দুল মজিদ খান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, সেলিম আলতাফ জর্জ এবং বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন।