পি কে হালদারকে ফেরাতে সব চেষ্টা চলছে: দুদক

বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2022, 01:19 PM
Updated : 16 May 2022, 01:19 PM

সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভারতে কিছু মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডও চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশনে সকালে আমরা নিজেরা বসেছি এবং পরবর্তী কর্মকাণ্ড কী হবে, কমিশন থেকে এ বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।“

তাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, “ইন্টারপোল খুব দ্রুত রি-অ্যাক্ট করেছে, তারা দ্রুতই আমাদের অনুরোধে প্রেক্ষিতে ভারতীয় ইন্টারপোল বডির সাথে যোগাযোগ করে আসামিকে ফেরত আনার পদক্ষেপ নিয়েছে।”

গুঞ্জন ছিল, পি কে হালদার কানাডায় গিয়ে ফেরারি জীবন যাপন করছেন। কিন্তু গত শুক্রবার হঠাৎ করেই খবর আসে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে অভিযানে নেমেছে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পরদিন তাকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।

পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান দুদক মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব।

তিনি বলেন, “আমরা হোম মিনিস্ট্রিতে চিঠি লিখব, এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা যায়। আপনারা জানেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিও রয়েছে।

“ভারতে যে সম্পত্তির খবর পাচ্ছি, তার কিছু কিছু খবর আমরা আগে জানতাম। আরও কিছু খবর আমরা জানছি। এর ইনডিটেইলস জানার জন্য আমাদের বাংলাদেশের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে অনুরোধ জানাব যে, এই সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করার জন্য।”

এছাড়া ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দেশটির আদালতের সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।

“সেসব তথ্য নিয়ে নতুন করে সাপলিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার বিষয়ে পরিবর্তীতে পদক্ষেপ নেব।”

অর্থ পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদক ৩৪টি মামলা করেছে জানিয়ে সাঈদ জানান, এসব মামলার মধ্যে কয়েকটির অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। আরও কিছু নতুন মামলাও করা হবে।

ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে কত সময় লাগতে পারে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভারতে যেহেতু তারা বেশকিছু মামলা করেছেন, হয়ত আরও মামলা করবেন। দুই-একটা মামলায় রিমান্ডেও নিয়েছেন। এখন আমাদের দিক থেকে প্রেসার ও চেষ্টা থাকবে যে, যত দ্রুত তাকে আমরা আমাদের দেশে নিয়ে আসতে পারি। সেজন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ ও চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”

তবে ভারত যদি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচার সেই দেশে সম্পন্ন করতে চায় তাহলে তাকে ফেরাতে সময় লাগতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

 “সেখান থেকে কতদিনের মধ্যে ফেরত আনা যায়, সেটা স্পেসিফিক বলা কঠিন। সেখানে মামলা বা এর বিচার কতদিন লাগবে। অথবা বিচারের আগেও ফেরত আনা যাবে কি যাবে না, এই বিভিন্ন বিষয়ের কারণে সময়ের বিষয়টি নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।”

পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচারের পেছনে যদি আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকলেও কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না, এ প্রশ্নের উত্তরে দুদকের এই মহাপরিচালক বলেন, “তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের ব্যাপারে যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য পাই, অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।”