সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে এ আবেদন করা হয় বলে এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানান।
শিশির মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করে দিয়েছে।
আদালত আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শিশির মনির।
তিনি বলেন, “আদালতের আদেশেই দুই শিশু মায়ের সঙ্গে আছেন। আদালতের নির্দেশেই মায়ের জিম্মায় থাকা শিশুদের সঙ্গে বাবার দেখা করার সুযোগ রয়েছে। তবে এ নির্দেশনা অমান্য করে ইমরান শরীফ জোর করে মাঝে মাঝেই শিশুদের নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যান। এ কারণে আদালত অবমাননার আবেদনটি করা হয়েছে।”
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের এক আদেশের বিষয়ে বলা হয়েছিল, এরিকো ও শরীফের দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে। এ সময় পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছে থাকবে। মায়ের সাথে আলোচনা করে বাবা শিশুদের সাথে দেখা করতে পারবেন।
শিশুরা কার অভিভাবকত্বে বা জিম্মায় থাকবে- আইন অনুসারে এই সিদ্ধান্ত সাধারণত নেওয়া হয় পারিবারিক আদালতে। আর শিশুদের মা হাই কোর্টে যে রিটটি করেছিলেন, সেটি হেবিয়াস করপাস রিট। কাউকে বেআইনিভাবে আটক করা হলে তাকে আদালতের সামনে হাজির করার জন্য এ ধরনের রিট মামলা হয়।
হাই কোর্ট রিটটি চলমান রেখে যে আদেশ দিয়েছিল, সেটি কার্যত বাবার পক্ষে গিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করেছিলেন শিশুদের মা।
মামলার পারিপার্শ্বিকতা ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় কথা উল্লেখ করে আপিল বিভাগ বলেছিল, এ আদালতের এখতিয়ারাধীন এলাকার বাইরে দুই শিশুকে নেওয়া যাবে না। ফলে শিশু দুটিকে এখন বাংলাদেশের বাইরে নেওয়ার সুযোগ নেই তাদের জাপানি মায়ের।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গতবছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলে বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।