পি কে হালদারকে কীভাবে ফেরত পাওয়া যাবে?

বহিঃসমর্পণ বা বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনেই ভারতে সদ্য গ্রেপ্তার পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2022, 05:19 PM
Updated : 14 May 2022, 05:27 PM

ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক খাত থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাতের পর পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তিন মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনার কথাও বলছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা।

আর মামলার সূত্র ধরে তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ভারতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারিনি। জানার পরেই যত দ্রুত সম্ভব বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”

কবে নাগাদ তাকে আনা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব।”

অবশেষে গ্রেপ্তার

হাজার কোটি টাকা আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে বছর কয়েক ধরে ফেরারী জীবনযাপন করা পি কে হালদার নামে পরিচিত প্রশান্ত কুমার হালদার কানাডায় পালিয়েছিলেন বলে গুঞ্জন ছড়ালেও গ্রেপ্তার হয়েছেন ভারতে; যেখানে তার ও সহযোগীদের বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদারের বিপুল অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সামনে আসার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত নামলে গা ঢাকা দেন তিনি; যাকে অবশেষে গ্রেপ্তার করে ভারতের একটি তদন্ত সংস্থা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিভিন্ন মাধ্যমে পি কে হালদারের ভারতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জেনেছেন বলে জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা এবং তার ভাইও পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে খবর এসেছে।

হঠাৎ করে শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তার এবং সহযোগীদের সম্পদের খোঁজে অভিযান শুরু হলে নতুন করে ওঠে আলোচনা। তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০ জায়গায় অভিযানের খবর শুক্রবার ভারতের সংবাদ মাধ্যমে আসে।

দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এই অভিযান চালায় পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে।

এদের সবাইকে বাংলাদেশি নাগরিক উল্লেখ করে তাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি রয়েছে বলে খোঁজ পাওয়ার কথাও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ইডি।

এর একদিন বাদেই পি কে হালদারের আটকের খবর এল। তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও-ও এসেছে সোশাল মিডিয়ায়।

উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরের এ বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় তদন্ত সংস্থা ইডি।

কীভাবে ফেরত আনা যাবে?

দেশে তার গ্রেপ্তারের আলোচনার মধ্যেই পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সামনে এল।

এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর জানান, একজন বন্দিকে হস্তান্তরে সাধারণত সর্বোচ্চ তিন মাস সময় লাগতে পারে।

বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়ে তিনি জানান, কোনো বন্দিকে ফেরত আনার ব্যাপারে সরকার ‘আনুষ্ঠানিকভাবে যথাযথ মাধ্যমে’ সেই দেশের সরকারকে চিঠি দিবে। চিঠি প্রাপ্তির পর সেই সরকার বিবেচনা করবে। পরে বিনিময়ের মত হলে তারা বন্দিকে ফেরত দেবে।

“পি কে হালদারের বিষয়ে অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিন মাসের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব,” যোগ করেন তিনি।

২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি করে বাংলাদেশ। এই চুক্তির আওতায় দুই দেশ বন্দি বিনিময় করার সুযোগ পাবে।

এ চুক্তি হওয়ার আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত পার করিয়ে দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় হত জানিয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই চুক্তির পর এরই মধ্যে বেশ কিছু বন্দি বিনিময় হয়েছে।

বাংলাদেশের কারাগারে থাকা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারত চাওয়ার পর থেকে এই বন্দি বিনিময় বা বহিঃসমর্পণ চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে। 

বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রে দুই দেশের সুসম্পর্কের বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।

তবে বন্দি ফেরত আনার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা এনসিবি এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ করতেই তিন থেকে চার মাস লেগে যায় বলে জানান তিনি।

“এখানে একটা সমস্যা আছে। বন্দি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশ বন্দির বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া সাজা দেখতে চায়। নিম্ন আদালত থেকে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হলেও চলে।

“তদন্তাধীন বিষয়ে তারা কোনো গুরুত্ব দেয় না। তবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যেহেতু সুসম্পর্ক রয়েছে সে কারণে পি কে হালদারকে দ্রুত ফেরত আনার সম্ভবনা রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমেই ২০১৫ সালে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক দাগী, দুর্ধর্ষ আসামীকেও এই চুক্তির অধীনে ভারত থেকে আনা হয় এবং এটা চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন: