ডেসটিনি: জরিমানার টাকা পাবেন ক্ষতিগ্রস্তরা, কমিটি করার নির্দেশ

গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, এমডিসহ ৪৬ জনকে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করে তা ক্ষতিগ্রস্তদের ভাগ করে দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2022, 04:08 PM
Updated : 12 May 2022, 04:23 PM

আর বিষয়টি তদারক করতে হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলার রায় ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই নির্দেশনা দেন।

রায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে ১২ বছর এবং কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মামলার বাকি ৪৪ আসমিকেও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে আসামিদের।

এক হাজার পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়েছে, ডেসটিনির যেসব সম্পত্তি ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হল।

আর আসামিদের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার টাকা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৫ (বি) ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সকল শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের সমান হারে ভাগ করে দিতে হবে।

সেজন্য সরকারকে একটি কমিটি গঠন করে দিতে হবে, যার চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, একজন উপ- মহা পুলিশ পরিদর্শক, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং সমবায় বিভাগের রেজিস্ট্রিার সেখানে সদস্য হিসেবে থাকবেন।

মামলার তথ্য অনুযায়ী, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তাতে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

রায়ের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মীর আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি মাইলফলক রায়। মাল্টিপারপাস কোম্পানি গঠন করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ এবং তা পাচার করায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে।”

ক্ষতিপূরণ বণ্টনে রায়ে কমিটি করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের অনুকূলে যে সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যারা ভোক্তা, কারা কীভাবে কতটুকু পাবে ,তা বুঝিয়ে দেবে এই কমিটি।

“এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাবরে নিদেশনা প্রয়োগ করেছেন আদালত। যেন তাকে সাবর্ক্ষণিক নিয়োজিত রাখা হয় এ কাজটি করার জন্য। আইও যেন তা করেন। যারা নিঃস্ব হয়ে গেছে (ভোক্তা), তাদের মধ্যে এ টাকা প্রপারলি ডিস্ট্রিবিউট করার কথা রায়ে বলা হয়েছে।”

কতদিনের মধ্যে এ টাকা বণ্টন করার কথা বলা হয়েছে জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, পুরো রায় পেলে সেটি স্পষ্ট হবে।

দুদকের উপ পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা করেন।

তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রোজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।

আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রোজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হত।

দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাৎ করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়।

এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২০২ জনের সাক্ষ্য শুনে রায় দিল আদালত। ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।