ঈদের আগেই যেন ঈদ নিয়ে এল নতুন ঘর

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে নতুন ঘর পেয়ে আনন্দে ভাসছে ৩৩ হাজার পরিবার, এক সময় মাঁথা গোজার ঠাঁই না থাকা এসব ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার এখন স্বপ্ন দেখছে নতুন করে বাঁচার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2022, 04:30 PM
Updated : 26 April 2022, 04:30 PM

মঙ্গলবার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে নতুন ঘর পেয়ে অন্যদের মতোই উচ্ছ্বসিত বরগুনা সদরের গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুর তলা গ্রামের রিনা আকতার, বাচ্চু মিয়া ও রাবেয়া।

এক সময় ঢাকার মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করা ভূমিহীন রিনা আকতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন,আজকে মনে হচ্ছে আমার জীবনে ঈদ। আমারও একটা ঘর হয়েছে। এটা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি।”

রিনা এখন আর ঢাকায় গিয়ে কাজ করতে চান না। প্রধানমন্ত্রীর ‍উপহারের ঘর পেয়ে নিজ এলাকাতেই কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করতে চান।

দুই ছেলেকে নিয়ে ষাটোর্ধ্ব রাবেয়ার সংসার চলত কোনোরকমে। জীবনের শেষ বয়সে এসে এখন তিনি জমিসহ পাকা ঘরের মালিক, বিষয়টা এখনও যেন অবিশ্বাস্য ঠেকছে।

আবেগাপ্লুত এই বৃদ্ধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “সারাটা জীবন মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করে জীবনটা শেষ করেছি। কোথায় কোথায় যে থেকেছি… তা এখন আর মনে করতে চাই না।

ঘরে পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বাচ্চু মিয়া।

“কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে নিজের ঘরে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকব, এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।”

ঘরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাবেয়া বলেন, “আমি দুই হাত তুলে দোয়া করি, যেন তিনি আমাদের মত অসহায় মানুষের জন্য আরও কাজ করতে পারেন।”

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে এবার দেশের ৪৯২টি উপজেলার অসহায় পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব ঘর হস্তান্তর করেন।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, খাজুর তলা প্রকল্পে মোট ৩২৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপে নির্মিত ৫০টি ঘর মঙ্গলবার হস্তান্তর করা হচ্ছে। একই দিনে বরগুনা জেলায় ৪১১টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার ঘর পাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, খাজুর তলা প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের ২২ জন, ১০ জন ভিক্ষুক, ১৯ জন প্রতিবন্ধী, ২৮ জন বিধবা ও ৪১ জন হিন্দু পরিবারকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। এ পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য ছাগল পালনসহ বিভিন্ন ছোটখাটো কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

খাজুর তলা গ্রামের ভ্যানচালক বাচ্চু মিয়ার বড় ছেলে মো. শাহিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ালেখা করছেন। ছোট ছেলে মো. মিজানুর রহমান পড়েন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়। অভাবের সংসারে বহু কষ্টে দুই ছেলের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন বাচ্চু।

উপহারের ঘর পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন রিনা আকতার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য কোনো জমি বা ঘর করে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এখন আমি জমি ও ঘরের মালিক।

“আমার দুইটা ছেলের এখন একটা স্থায়ী ঠিকানা হল। এতদিন অনেকে তাদের অবহেলা করলেও এখন আর করতে পারবে না।”

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানিয়েছিলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ২ শতক জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছেন দেশের ভূমি ও গৃহহীন প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯ পরিবার।

দেশে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রকল্প নেওয়া হয়। এর আওতায় ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ লাখ ৭ হাজার ২৪৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে জানান সচিব।

আরও খবর: