মুচলেকা নিয়ে সোমবার প্রথম প্রহরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন কলাবাগান থানার এসআই অর্জুন রায়।
রাত সোয়া ১২টার দিকে সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি সাগুফতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মা এবং ভাইকে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে, বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।”
রোববার বেলা ১১টার দিকে কলাবাগানের তেঁতুল তলা মাঠের সামনে থেকে রত্না ও তার তরুণ ছেলে প্রিয়াংশুকে ধরে কলাবাগান থানা নিয়েছিল পুলিশ। ১৩ ঘণ্টা পর তারা ছাড়া পেলেন।
সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সদস্য রত্না তেঁতুল তলা মাঠ রক্ষার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। ওই মাঠ বরাদ্দ নিয়ে কলাবাগান থানার নতুন ভবন করা হচ্ছে।
শেউতি বলেন, “আন্দোলন না করার এবং আন্দোলন করলে পুলিশ যে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে, এই শর্তে তাদের মুক্তি দিয়েছে।”
সেক্ষেত্রে এই মাঠটি রক্ষার আন্দোলনের কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সে ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
রত্নাকে আটকে রাখলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি পুলিশ; যদিও আটকানোর সময় পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন ডিএমপির নিউ মার্কেট জোনের সরকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।
রত্নাকে আটকের পর অধিকারকর্মীরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। খুশি কবিরসহ অনেকে সেখানে ছুটেও যান। উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা কলাবাগান থানার সামনেও অবস্থান নিয়েছিলেন।
বটতলা নামের একটি সংগঠনের পরিচালক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাতে থানার সামনে আমরা প্রতিবাদ করেছি। সেখানে বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বিভিন্ন সংগঠনের শতাধিক কর্মী ছিলেন।”
পান্থপথের দক্ষিণ পাশে কলাবাগানের ভেতরে ছোট্ট তেঁতুল তলা মাঠটিতে ওই এলাকার শিশুরা খেলে, নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনও চলে সেখানে।
মাঠটিতে কলবাগান থানা ভবন করার ঘোষণা দেওয়ার পর রত্নার নেতৃত্বে স্থানীয় একদল ওই মাঠটি রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
পুলিশ এর আগে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে গেলে স্থানীয়দের বিশেষ করে নারীদের বিরোধিতার মুখে পড়ে। এরপর ওই মাঠ ঘিরে পুলিশ কাঁটাতারের বেড়া দিলেও রত্না তার বিরোধিতা করে যাচ্ছিলেন।
রোববার পুলিশ ওই মাঠে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করলে রত্না তার ছেলেকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। ফেইসবুকে তা লাইভ করার এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ধরে থানায় নিয়ে যায়।
তখন পুলিশ কর্মকর্তা ফারুকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ওই জায়গাটি সকল নিয়ম মেনে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। সৈয়দা রত্না সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাকে আপাতত আটক করা হয়েছে।”
রত্নাকে আটকের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অধিকারকর্মী খুশি কবির, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বেলার সংগঠক আলমগীর কবির, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরসহ উদীচীর নেতা-কর্মীরা।
এলাকাবাসীও জড়ো হন সেখানে। তাদের একজন প্রৌঢ় নারী শামীম আরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা স্বাধীনতার আগে থেকে এই জায়গাটি খোলা মাঠ হিসাবে দেখে আসছেন। এরশাদ আমলে একবার দখলের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু এলাকাবাসী প্রতিরোধ করেছিল।
রাজধানীতে শিশুদের খেলার জায়গার সঙ্কটের মধ্যে মাঠটি ঘিরে পুলিশের দেয়াল নির্মাণের কাজ দেখে শামীম আরা বলেন, “আজ মনে হচ্ছে, আমার সন্তানকে হারাতে যাচ্ছি।”