নিউ মার্কেট এলাকা ফের রণক্ষেত্র

মধ্যরাতে আড়াই ঘণ্টার সংঘাতের পর থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে সকালে আবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2022, 05:06 AM
Updated : 19 April 2022, 07:21 AM

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানববন্ধন করতে রাস্তায় জড়ো হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরাও বেরিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

কলেজের সামনের সড়কে লাঠি, রড হাতে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের ঢিল ছুড়তে দেখা যায়। অন্যদিকে নিউ মার্কেট ওভারব্রিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে থাকা দোকান কর্মচারীরা পাল্টা জবাব দেয়। 

নিউ মার্কেট থানার পরিদর্শক অপারেশনস হালদার অজিত ঠাকুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিউ মার্কেটসহ আশেপাশের এলাকার সকল দোকান পাট বন্ধ রয়েছে।শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান করছে। দোকান কর্মচারীরাও বিচ্ছিন্নভাবে আছে।”

সকাল থেকে হাজার হাজার দোকান কর্মচারীকে লাঠি আর ইট নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছেন। আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজ ফটকের সামনে এবং হলের ছাদে অবস্থান নিয়ে আছেন।

রাস্তায় অনেকের হাতে লাঠি আর মাথায় হেলমেট দেখা গেছে। ঢিল বৃষ্টির মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ছুড়ছে পুলিশ। কয়েকটি বিস্ফোরণেরও আওয়াজও পাওয়া গেছে।

উপ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “দুই পক্ষ আবারো মুখোমুখি হয়েছে। আমরা পরিস্থিস্তি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”

আগের রাতের সংঘর্ষের পর থেকেই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল, সকালে সংঘর্ষ শুরুর পর রাস্তায় কাঠসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জড়ো করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এই সংঘর্ষের কারণে সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত অন্তত ৭৫টি বিপণি বিতান বন্ধ রয়েছে বলে দোকান মালিকরা জানিয়েছেন। ঈদের এই ভরা মৌসুমে সংঘর্ষ আর দোকানপাট বন্ধ থাকায় উদ্বেগ রয়েছে তাদের মধ্যে।

নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবপক্ষকে শান্ত করে রাত ৪টার দিকে আমরা বাসায় ফিরেছিলাম। আমরা ছাত্রনেতাদের কথা দিয়েছিলাম যে ব্যবসায়ীরা আর সংঘর্ষে জড়াবে না।

কিন্তু সকালে ছাত্ররা আবার সড়ক অবরোধ করে। ফলে পাশে চাঁদনীচক, গাউছিয়া ও অন্যান্য মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আবার একত্রিত হয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।”

নিউ মার্কেট মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য রাজ্জাক জানান, মূল সড়ক বন্ধ থাকায় যানবাহনকে ঘুরে যেতে হচ্ছে। তাতে আশপাশের সব সড়কে চাপ পড়ছে। নীলক্ষেতের দিকে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।

কী নিয়ে সংঘাত

সোমবার রাত ১২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর আড়াই ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া চলে।

শেষ পর্যন্ত রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে নিউ মার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান জানান।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতে দাবি করেছিল, নিউ মার্কেটে তর্কাতর্কির জেরে দোকানকর্মীদের মারধরের শিকার হন তিন ছাত্র। সেখান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত।

সকালে ব্যবসায়ী, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল একটি খাবারের দোকানে কথা কাটাকাটি থেকে।

নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির নেতা শাহীন আহমেদ বলেন, “নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেইটের কাছে একটি খাবারের দোকান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। ওই খাবারের দোকানের লোকজনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাকবিতণ্ডার পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে এসে হামলা চালায়।

“রাতে ছাত্ররা অগ্নিসংযোগেরও চেষ্টা করে, কয়েকটি দোকানে লুটতরাজ চালায়। পুলিশ ঠিক সময়ে না এলে তারা মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দিতে পারত।”

সাখাওয়াত হোসেন নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “চতুর্থ বর্ষ আর মাস্টার্সের তিনজন শিক্ষার্থী রাতে খেতে যায়। দাম যা আসছে তার চেয়ে একটু কম দিতে চেয়েছিল তারা। এসময় ঝগড়ার এক পর্যায়ে দোকানে থাকা ধারালো ছুরি নিয়ে শিক্ষার্থীদের গুরুতর জখম করে দোকানিরা। এই খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভাংচুর চালায়। এরপর ব্যবসায়ী ও পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে দেয়।

“এরপর রাতে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের দিক থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। আর ছাত্রদের এই দিক থেকে বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। রাতে ৭ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ মোট ১৫ জন আহত হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।”

নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার শাহেন শাহও বলেছেন, নিউ মার্কেট এলাকায় একটি খাবারের দোকানে ‘দাম দেওয়া নেওয়া নিয়ে’ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

রাতের সংঘর্ষের সময় আহতদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীসহ চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। অন্য জনকে স্থানান্তর করা হয় অন্য হাসপাতালে।

মোশাররফ হোসেন নামে ম্যানেজমেনট চতুর্থ বর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছে জানিয়ে উপ কমিশনার শাহেন শাহ বলেন, তার অবস্থা এখন ‘স্থিতিশীল’।

“তবে সেই ক্ষোভ থেকেই মূলত সকালে শিক্ষার্থীরা আবারো সড়কে অবস্থান নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের হুমকির প্রেক্ষিত্রে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে তাদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে। তারা দোকনপাট বন্ধ রেখেছে। আমরা দুই পক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।”