হুমায়ুন আজাদ হত্যা: বিলম্বিত রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি

বহুমাত্রিক লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তা দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন লেখক, শিক্ষক, সহকর্মী, প্রকাশক ও শিক্ষাবিদরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2022, 11:35 AM
Updated : 13 April 2022, 03:04 PM

দেড় যুগ আগে একুশে বইমেলার বাইরে বহুমাত্রিক লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার ঘটনায় চার জঙ্গির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।

বুধবার দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন। সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি চার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তিনি।

দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা দুই আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শুরা সদস্য মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন এবং আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বাকি দুই আসামি নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু এবং সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ পলাতক।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়টা অনেক দেরিতে হল। এটা আরও আগে হওয়া উচিৎ ছিল। তদন্তটা আরও দ্রুত হতে পারত।

“এখন যে রায় হয়েছে, এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য। যারাই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে, এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছ। যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয়।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের সহকর্মী অধ্যাপক রফিকুল্লাহ খান বলেন, “এ রায়ে যারা ধর্মান্ধ, জঙ্গিবাদী, তাদের যদি শিক্ষা হয়, তবেই এ রায় ঘোষণার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”

তবে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী এ মামলার বিচারে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধী হয়েও কীভাবে এতটা সেইফ থেকে গেল, কীভাবে- এটা বুঝতে পারলাম না।

“যার নাম হুমায়ুন আজাদ স্বয়ং বলে গেছেন…তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েই কিন্তু আঘাতটা করে। …এখন রায় দ্রুত কার্যকর করাই হবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।”

হুমায়ুন আজাদের এক সময়ের ছাত্র রফিকুল্লাহ পরে হয়েছেন সহকর্মী। একসঙ্গে অনেক সময় কেটেছে তাদের।

আবেগাপ্লুত এ অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাশাপাশি ভবনে থাকতেন তারা। হুমায়ুন আজাদের সন্তানেরাও ছিলেন খুবই আদরের; সন্তানের মত।

“দীর্ঘ ১৮ বছর পর রায় হল, গতকাল থেকে একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছি। এত দেরি হয়ে গেছে! একটা ঘটনার পর এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময় চলে গেলে আমাদের দেশে তো অনেক ঘটনা ঘটে, অনেক খারাপ ঘটনাও ঘটেছে। সবকিছু বিলম্ব হয়ে যায়।

“এর পরও এ রায় পাওয়া। এ রায় থেকে ধর্মান্ধ, জঙ্গিবাদীদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।”

রফিকুল্লাহ খান বলেন, “ধর্মান্ধ হয়ে নিজের হাতে ছুরি তুলে নিয়ে একজনকে হত্যা করার অধিকার তো কেউ দেয়নি; ধর্মের নামে তারা এটা কিভাবে করে!”

দেরিতে হলেও মামলার রায়ে খুশি আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি। তিনি বলেন, “আশা করি, অবিলম্বে সরকার সেই রায় কার্যকরে পদক্ষেপ নেবে।”

“এর মাধ্যমে মুক্তচিন্তার, মুক্তবুদ্ধি চর্চার যে ধারা অব্যাহত ছিল, হুমায়ুন আজাদ যে জন্য কাজ করে যাচ্ছিল- আমি মনে করি এ ধারার পক্ষে রায়টি হয়েছে। বাংলাদেশ যে মূলনীতির উপরে স্বাধীন হয়েছিল, এর বাস্তবায়ন এ রায়ের মাধ্যমে আমি দেখতে পাচ্ছি।”

লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হক এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালে সন্ত্রাসী হামলায় একমাত্র ছেলে ফয়সল আরেফিন দীপনকে হারান এ শিক্ষক। শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের অফিসে খুন হন জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার দীপন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, “জঙ্গিবাদী তৎপরতায় এ দেশে প্রথম পর্যায়ে লেখক হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হন। … মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন যখন শুরু হল, তখন দেখা গেল একরকম গুপ্তহত্যার কর্মকাণ্ড আরম্ভ হয়ে গেল। এসব দমন করতে হবে আইন-কানুন, ফাঁসি দিয়ে।

“রায় হয়েছে- এটা ভালো। বিচারহীনতার দেশ বলে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে গিয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে- বিচার হচ্ছে, রায়ও হচ্ছে। তবে নিম্ন আদালতের রায়ের পরে হাই কোর্টের রায় হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা অপ্রতুল। এজন্য নিম্ন আদালতের পর হাইকোর্টে ফাইনালাইজ হতে অনেক দিন সময় লাগে।“

যথাসময়ে রায় হলে অনেক হত্যাকাণ্ড ‘ঠেকানো যেত’ মন্তব্য করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেরিতে হলেও রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, আমাদের দেশে সুবিচার আছে। এজন্য আমরা বিজ্ঞ আদালত বা বিচারব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানাই।”