শনিবার টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যায় চারজনকে গ্রেপ্তারের এবং হত্যাকাণ্ডে তাদের ভূমিকার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে র্যাব। এতে গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের ভিত্তিতে খুনের কারণ, পরিকল্পনা, ভাড়াটে খুনির জন্য অপরাধজগতের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ মাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর রাতে নিহত টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই চারজনের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলছেন, “এরা সেরকম কোনো লেবেলের না, এদেরও লিডার আছে। ওদের ধরতে হবে।“
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিল ডলি বলেন, “আমি আগেও বলেছি শুটার কোনো বিষয় না। তাকে ভাড়া করেছে, সে টাকার জন্য গুলি করেছে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানায়।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন- মতিঝিল থানাধীন ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক (৫২), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮) ও মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ (৫১)।
র্যাবের দাবি, এরা ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে যুক্ত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িয়েছে ঢাকা ও দুবাইয়ের অপরাধজগতও। টিপুকে খুন করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা অপরাধজগতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন; বাজেট ছিল ১৫ লাখ।
রাজনীতি ও অপরাধজগতের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঢাকা ও দুবাইয়ের মধ্যে সংযোগের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন। হত্যাকাণ্ডের ১২ দিন আগেই মুসা দুবাই চলে যান।
হত্যার কারণ হিসেবে র্যাব বলছে, চাঁদাবাজি ও দরপত্র নিয়ে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব, রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যার বদলা এবং বোঁচা বাবু হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
শাহজানপুরের প্রকাশ্য রাস্তায় গত ২৪ মার্চ এক পিস্তলধারীর এলোপাথারি গুলিতে নিহত হন মাইক্রোবাসে থাকা মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু (৫৪)। সেসময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ির চালক মুন্না।
এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে খুনিদের পাশাপাশি পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছেন নিহত টিপুর স্ত্রী ডলি।
শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে কথা বলেন।
ফারুকের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফারুকের (ওমর ফারুক) তো কিছু নাই। ও তো ফুটের (ফুটপাথের চাঁদার) টাকা দিয়া চলে। ও ক্যামনে খুন করানোর জন্য নয় লাখ টাকা দেয়।
“এই টাকা ওরে কে দিল? আর আন্ডারগ্রাউন্ডের ওরা আট আনা পয়সা কাউরে টাকা দেয় না, ওরা খালি নিতেই থাকে। আমি ওদের গডফাদারদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই। যদি তারা শাস্তির আওতায় না আসে তাহলে আরও খুন-খারাবি বাড়বে। আমার জীবন নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠবে।”
ফারুক, কাইল্লা পলাশ এদের সম্পর্কে আগে কিছু শুনলেও মুসার বিষয়ে আগে তেমন জানতেন না উল্লেখ করে ডলি বলেন, “এখন অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে। তবে তাকে তেমন বড় সন্ত্রাসী বলে মনে হল না। সামান্য টাকার জন্যও না কি সে অনেক কিছু করে। কিসের সে বড় সন্ত্রাসী, গডফাদার। তার গডফাদার কে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।”
আরও পড়ুন-