কানাডার উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়ল মুহিবুল্লাহর পরিবার

বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর পরিবারের ১১ সদস্য কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2022, 04:57 AM
Updated : 1 April 2022, 05:15 AM

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা রওনা হন বলে জানিয়েছেন মুহিবুল্লাহর পারিবারিক বন্ধু মানবাধিকারকর্মী নূর খান।

শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মহিবুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন, নয় ছেলেমেয়ে এবং এক মেয়ের জামাই রয়েছেন ওই ১১ জনের মধ্যে। তাদের রিফিউজি মর্যাদা দিয়ে কানাডার গভার্নমেন্ট অ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রামের আওতায় নেওয়া হচ্ছে।”

গতবছর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং-১ (ইস্ট) লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-৮ ব্লকে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ। মিয়ানমারের মংডুতে স্কুলে শিক্ষাকতা করতেন বলে রোহিঙ্গাদের কাছে তিনি ‘মুহিবুল্লাহ মাস্টার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মুহিবুল্লাহর স্বজন ও অনুসারীরা হন্যে হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন তারা।

গত বছরের অক্টোবরে মুহিবুল্লাহর ভাগ্নে ও আরএসপিএইচআর এর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ বলেছিলেন, “মুহিবুল্লাহর স্ত্রী, সন্তান, মা, ভাইসহ স্বজনদের ১৮টি পরিবারের সদস্যরা কুতুপালং ক্যাম্পে নিরাপদ মনে করছেন না। এসব পরিবারের ৯৪ জন সদস্যকে বর্তমানে ক্যাম্পের বাইরে অজ্ঞাত নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। তবে তারা সেখানে থাকতেও রাজি নয়।

বাংলাদেশের বাইরে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার কথা বলেছিলেন রশিদুল্লাহ। জানিয়েছিলেন, তাদের এই ইচ্ছার কথা জাতিসংঘের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় তারা জানিয়েছেন।

মুহিবুল্লাহ বন্ধু নূর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বিমানবন্দরে পরিবারটিকে বিদায় জানাতে যান। পরিবারের সদস্যরা এদেশের মানুষ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুহিবুল্লাহর প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির কার্যক্রম যাতে চলমান থাকে, সেজন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

বেশ কয়েকবছর আগে জীবন বাঁচাতে নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে সপরিবারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হন মুহিবুল্লাহ। সেখানেই গড়ে তোলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)।

রোহিঙ্গাদের কাছে মুহিবুল্লাহ ছিলেন বাড়ি ফেরার স্বপ্নে বিভোর এক মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারে সবকিছু ফেলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখো মানুষের মাঝে সেই স্বপ্ন তিনি বিলিয়ে আসছিলেন।

মুহিবুল্লাহর স্বজন ও অনুসারীদের দাবি ছিল, দেশে ফেরার এই স্বপ্নই তার কাল হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যেই একটা অংশ দেশে ফিরতে চায় না। সশস্ত্র দলটির সঙ্গে ‘মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর যোগাযোগ’ রয়েছে বলেও ক্যাম্পের অনেকের বিশ্বাস।

মুহিবুল্লাহ উখিয়ার ১-ইস্ট লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৭ ব্লকে থাকতেন। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন তিনি। জেনিভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায়ও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবেও পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।

পুরোনো খবর