স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হচ্ছে এটুআই, নামও বদলাচ্ছে

জনবান্ধব তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দিতে কাজ করে এসপায়ার টু ইনোভেইট (এটুআই) প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে নতুন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় রূপ দিচ্ছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2022, 02:03 PM
Updated : 28 March 2022, 04:21 PM

এ লক্ষ্যে এজেন্সি টু ইনোভেইট (এটুআই) নামে একটি সংস্থা করার জন্য এ সংক্রান্ত আইনের খসড়ায় সোমবার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সভাশেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ব্যবসাভিত্তিক ‘স্বায়ত্বশাসিত’ ও ‘স্বনির্ভর’ সংস্থা হবে এটুআই। ১৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ থাকবে এটুআইয়ের।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের ‘উন্মুক্ত মার্কেট’ থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপির অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি শুরু করা হয়।

পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৮ সালে এটুআই প্রোগ্রামকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।

২০২০ সালে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর নাম পরিবর্তন করে এসপায়ার টু ইনোভেইট (এটুআই) রাখা হয়।

বর্তমানে এটা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ইউএনডিপির অধীনে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সোমবার মন্ত্রিসভায় এজেন্সি টু ইনোভেইট (এটুআই) আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়ার কথা জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের যেহেতু মধ্যম আয়ের দেশ হচ্ছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদেরকে একটা এজেন্সি টু ইনোভেইট (এটুআই) আইন, ২০২২ প্রণয়ন করা প্রয়োজন।”

তিনি জানান, ১৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি থাকবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এজেন্সির প্রধান নির্বাহীকে ওপেন মার্কেট থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। উচ্চতর বা বিদেশি ডিগ্রিধারী হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় বা বিজনেস সল্যুশনে হবে এই ডিগ্রি।

“ওদেরকে নর্মাল চ্যানেলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলেতো তারা আসবে না। এই রকম অফিসার যারা থাকবে, তাদেরকেও ওনারা ফিক্সড করে নেবেন। একটা সার্টেইন রেঞ্জে বেতন ফিক্সড করে নিয়ে নেবেন।”

সংস্থাটি অনেকটাই ‘স্বশাসিত’ ও ‘স্বনির্ভর’ থাকবে উল্লেখ করে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “ব্যবসায়ভিত্তিক সংস্থা তাদের বাজেট ও আয়-ব্যয়ের বিষয়গুলো দেখবে।

“এদের একটি তহবিল থাকবে। যা এজেন্সি টু ইনোভেইট তহবিল নামে অভিহিত হবে। এজেন্সি তাদের আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ করবে এবং বার্ষিক অডিট করে সরকারের কাছে জমা দেবে কম্পটোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফিস।”

এজেন্সি হয়ে গেলে এটুআই কর্মসূচির বর্তমান কার্যক্রম একীভূত হয়ে যাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বর্তমান লোকবল রাখার বিষয়েও এজেন্সি সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা তারা দেখবে। কারণ, অ্যাপিলেট ডিভিশনের একটা রায় আছে, ১৯৯৭ সালের পরের প্রজেক্টের লোককে রাজস্ব খাতের বেতনে নেওয়া যাবে না। কিন্তু যখন অথরিটি হবে, তখন তারা দেখবে ওদের ওখানে কীভাবে করবে।”

নতুন এজেন্সির আয়ের অনেক উৎস থাকবে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “সরকারের কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে। কেবল মন্ত্রণালয় কেন, বাইরের কাজের সাথেও সম্পৃক্ত থাকতে পারবে।

“অনেক টাকাপয়সা আয় করতে পারবে। ভালো একটা আয়ের উৎসও হতে পারে। নিজস্ব ফান্ডই হয়ে যাবে কয়েক বছরের মধ্যে। ভালো আয় করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।”

এজেন্সির কাজে সরকারের ‘প্রভাব’ কেমন থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তাদের আরও বেশি লিবার্টি থাকবে। তারা তাদের বোর্ডের মাঝে অ্যাপ্রুভ করে কাজগুলো করে নেবেন। তারা অ্যাপ্রুভ করে বাইরে থেকেও ফান্ড নিতে পারবে।”

ছয়টি উদ্দেশ্য সাধনে এটুআইকে এজেন্সি করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

এর মধ্যে রয়েছে- জনবান্ধব সেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনী সংস্কৃতির বিকাশ এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা। আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী যে কোনো কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ।

বাংলাদেশে যে কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অগ্রসর প্রযুক্তি সম্পর্কিত দক্ষতা উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রণোদনা এবং জনসচেতনতা ও চাহিদা সৃষ্টিতে সহায়তাও প্রদান করবে এটুআই।

সচিব বলেন, জনকল্যাণে প্রযুক্তি বিষয়ক উন্নত গবেষণা পরিচালনা এবং গবেষণায় উদ্ভাবিত পণ্য ও সেবার মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সহায়তা করাও তাদের উদ্দেশ্য।

“আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, শিল্প, শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাসহ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সেবা ও পরামর্শ প্রদান।

“আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমের অথরিটিকে বৈশ্বিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠাকরণ।”