শাহজাহানপুরের জোড়া খুন: আকাশ রিমান্ডে

রাজধানীর শাহজাহানপুরের রাস্তায় প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ দুইজনকে গুলি করে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার মাসুম মোহাম্মাদ আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে গোয়েন্দা ‍পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2022, 09:06 AM
Updated : 29 March 2022, 12:26 PM

ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্যমহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন সোমবার আকাশের জামিন আবেদন নাকচ করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার এদিন আকাশকে আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চান।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. রেজাউর রহমান রুমেল এবং হেমায়েত উদ্দিন খান হীরন। ১৫ মিনিটের শুনানিতে বিচারক মামলার তদন্ত কর্মকতার কাছে আকাশকে রিমান্ডে নেওয়ার কারণ জানতে চান।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, হত্যার প্রকৃত কারণ ও মূল পরিকল্পনাকারীকে সামনে আনার জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

“এটি অত্যন্ত আলোচিত জোড়া খুনের মামলা। যে অস্ত্র দিয়ে টিপুকে গুলি করা হয়েছে তা এখোনো উদ্ধার হয়নি, এমনকি যে মোটর সাইকেলে করে শ্যুটার আকাশ এসেছিল তাও উদ্ধার করা যায়নি। সে কারণে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি,” বলেন রুমেল।  

অন্যদিকে রিমান্ডের বিরোধিতা করে আকাশের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী শাহনাজ বেগম মনি। তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজতে আকাশের ওপর ‘অত্যাচার চালানো হয়েছে, তার নখ উপরে ফেলা হয়েছে’।

'চাকরিজীবী' আকাশ অফিসের কাজের জন্য বগুড়া গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন আইনজীবী মনি।

আসামীপক্ষের আইনজীবীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “কই, তার নখ তোলা হয়েছে তা তো দেখতে পাচ্ছি না। আর রিমান্ড আবেদনে যে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, তার জন্য অবশ্যই আইও রিমান্ড পেতে পারে।”

শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে আকাশরকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে ‘সতর্কতার সাথে’ জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

শুনানির সময় আকাশকে কাঠগড়ায় বসতে দেওয় হয়। তাকে সেখানে খানিকটা ক্লান্তও দেখাচ্ছিল। আকাশের চোখে চশমা ছিল। শুননিকালে বিচারক তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেননি, আশা নিজেও কিছু বলেননি।

রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ হলে আকাশকে হেলমেট ও বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে এজলাস থেকে কোর্ট হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢাকার শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪)। তার মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়ে গুলি ছোড়ে হেলমেটধারী আততায়ী।

ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না।

মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে কাজ সেরে হামলাকারী সড়ক বিভাজক টপকে গুলি করতে করতে রাস্তার অন্য পাশে অপেক্ষায় থাকা একটি মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

টিপু প্রায় এক দশক আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ৪-৫দিন আগে ফোনে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন তার স্ত্রী।

হত্যাকাণ্ডের তিন দিনের মাথায় রোববার বগুড়া থেকে আকাশকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আকাশই ‘মূল খুনি’। টিপুকে হত্যার জন্য তাকে ভাড়া করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি জয়পুরহাট পালিয়ে যান এবং সীমান্ত পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু যেতে না পেরে বগুড়া আসেন এবং সেখানে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।  

পুলিশ বলছে, টিপুকে হত্যা কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’ আকাশ। সেদিন মোটরসইকেলসহ আকাশের আরেক সঙ্গীর নাম জানলেও ‘তদন্তের স্বার্থে’ তা প্রকাশ করা হয়নি।

আকাশকে কে ভাড়া করেছিল, কত টাকায় ভাড়া করেছিল, হত্যার মোটিভ কী- সেসব বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি হাফিজ আকতার। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেছিলেন, “শুধু টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড নয়, সুবিধা পাইয়ে দেওয়া বা মাথার ওপর ঝুলে থাকা মামলা থেকে ছাড় পাওয়াও খুন করার শর্ত হিসেবে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চার/পাঁচটি সম্ভাবনা ধরে তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।”

পুরনো খবর