গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শনিবার বগুড়া পুলিশের সহযোগিতায় সেখান থেকে আকাশকে গ্রেপ্তার করেন তারা।
“হত্যার ঘটনার পর জয়পুরহাট পালিয়ে যায় আকাশ। সেদিক দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল। কিন্তু যেতে না পেরে বগুড়া আসে। সেখান থেকে বগুড়া পুলিশ সুপারের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
হাফিজ আকতার বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার ঘটনাটি ‘কন্ট্রাক্ট কিলিং’। গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহজাহানপুরে গাড়ির ভেতরে থাকা টিপুকে গুলি করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’ আকাশ।
“পাঁচ দিন আগে টিপুকে হত্যার জন্য ‘কন্ট্রাক্ট’ করা হয়, অস্ত্র দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন টিপুকে হত্যার জন্য কমলাপুর আইসিডি কনটেইনার এলাকা, এজিবি কলোনী এলাকায় সে ওঁৎ পেতে ছিল। কিন্তু সুযোগ পায়নি।"
সেদিন মোটরসইকেলসহ আরেকজন আকাশের সাথে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তার নাম জানা গেলেও তদন্তের স্বর্থে এ মহূর্তে বলা যাবে না।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “শুধু টাকার জন্য নয়, কোনো সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ও থাকতে পারে, যেসব মামলা আছে সেগুলো থেকে ছাড় পাইয়ের দেওয়ার বিষয় থাকতে পারে। সে নিজেই গুলি করার কথা স্বীকার করেছে। আর সে ঘটনার পর পালিয়ে জয়পুরহাট চলে গিয়েছিল।”
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ কয়েকজনের নাম বলেছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মোটরসাইকেল অস্ত্র উদ্ধারসহ যাবতীয় বিষয়ে তদন্ত করতে প্রকৃত ঘটনা বের করে আনতে সময় লাগবে।”
তবে আকাশই যে ‘মূল কিলার’, সে বিষয়ে ‘শতভাগ নিশ্চিত’ বলে দাবি করেন অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার।
তিনি বলেন, “প্রীতির নিহত হওয়ার ঘটনার বিষয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, ‘ট্রিগার ধরে ছিলাম স্যার, টিপু ছাড়া আর কোনো খেয়াল ছিল না।”
ঢাকার শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪)। তার মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়ে গুলি ছোড়ে হেলমেটধারী আততায়ী।
ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না।
মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে কাজ সেরে হামলাকারী সড়ক বিভাজক টপকে গুলি করতে করতে রাস্তার অন্য পাশে অপেক্ষায় থাকা একটি মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
জাহিদুল ইসলাম টিপুজাহিদুল ইসলাম টিপুসামিয়া আফনান প্রীতিসামিয়া আফনান প্রীতিটিপু প্রায় এক দশক আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ৪-৫দিন আগে ফোনে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন তার স্ত্রী।
যেহেতু বলা হচ্ছে, খুনি ভাড়া করে টিপুকে হত্যা করা হয়েছে, তাহলে এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড কি না প্রশ্ন করলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি হাফিজ আকতার।
জাহিদুল ইসলাম টিপু
সামিয়া আফনান প্রীতি
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আকতার জানান, ২০০৭ সালের একটি হত্যা মামলায় আকাশ আসামি বলে তারা জানতে পেরেছেন। সে হিসাবে তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। বিষয়গুলো পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আকাশের স্ত্রী সন্তান আছে, তার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে। ঢাকায় তারা থাকে পশ্চিম মাদারটেক এলাকায়।
গ্রাফিক আর্টস নিয়ে লেখাপড়া করে মুগদা এলাকায় কেবল টিভির ব্যবসা করতেন আকাশ। সেখান থেকে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় হত বলে গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য।
সোমবার আকাশকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার বলেন, “কার হুকুমে এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা জানার চেষ্টা করব।”