আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের দুদিন পরও খুনের ‘কারণ ও যোগসূত্র নিয়ে’ অগ্রগতির তথ্য জানাতে না পারলেও তদন্ত কর্মকর্তারা ‘আশাবাদী’ শিগগির সবকিছু খোলাসা হবে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্রটি অত্যাধুনিক বলে অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক ধারণা করছেন।
ঢাকার শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার রাস্তায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন মাইক্রোবাসে থাকা টিপু। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না।
মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে কাজ সেরে হেলমেটধারী আততায়ী সড়ক বিভাজক টপকে গুলি করতে করতে রাস্তার অন্য পাশে অপেক্ষায় থাকা একটি মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) প্রায় এক দশক আগে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
দলীয় কোন্দল এবং ৪-৫দিন আগে ফোনে হত্যার হুমকির বিষয়টি মামলায় উল্লেখ করেছেন ডলি।
শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এখন পর্যন্ত আলোচিত এ খুনের ঘটনার তদন্তে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
“তবে আমরা মাঠে কাজ করছি। আশা করি খুব শিগগির এ ব্যাপারে একটা ফলাফল দিতে পারব।”
তিনি কিছু আলামত ও মোটিভ পাওয়ার দাবি করে বলেছিলেন ‘আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি।’
গোয়েন্দা পুলিশও সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মতিঝিল বিভাগের (গোয়েন্দা) উপ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম।
“আমরা চেষ্টা করছি খুনিদের গ্রেপ্তারে। সর্বাত্মক চেষ্টা আছে। আশাবাদী।”
তবে কোনো কর্মকর্তাই হত্যার ‘মোটিভ’ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি।
টিপুর স্ত্রীর করা মামলায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছেন না।
তারা বলছেন, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্যে। তবে একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং পেশাদার ‘কিলার’ দিয়ে তা ঘটানো হয়েছে।
আগামী এপ্রিলেই একটি চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল সামিয়া আফনান প্রীতির।
হত্যার পেছনে এটা ছাড়াও আওয়ামী লীগের পদ-পদবি বা ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ে কোনো বিরোধ আছে কি না সে ব্যাপারেও তদন্ত করে ‘কারণ ও সূত্র’ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন “টিপু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। এর পেছনে কারা, নাটের গুরু কারা, কারা ঘটিয়েছে, সবকিছুই খোলসা করে আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হবে।”
এদিকে খুবই স্বল্প সময়ের এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সেটি অত্যাধুনিক বলে জানিয়েছেন সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনির হোসেন।
একের পর এক গুলি করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় নেওয়া এবং ঘটনাস্থল থেকে মোট ১২টি গুলির খোসা উদ্ধার হওয়া প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তার ধারণা অস্ত্রধারী দক্ষ ও অস্ত্রটি অত্যাধুনিক।
“আমরা এখনও অস্ত্রের গুলির খোসাগুলো পাইনি। পেলে পরীক্ষা করে বলা যাবে এটা কোন অস্ত্রের গুলি।”
প্রবীণ এক অস্ত্র ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পয়েন্ট ২২, পয়েন্ট ২৫ ও পয়েন্ট ৩২ বোরের অস্ত্র সাধারণ লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।
“অত্যাধুনিক হিসেবে পরিচিত এসব বোরের অনেক পিস্তল ‘ফুল অটোমেটিক’, যা ট্রিগার টিপলেই ম্যাগাজিন খালি করে দেবে; যাকে ব্রাশ ফায়ার বলে। আবার সেমি অটোমেটিকের ট্রিগার বারবার চাপরে ৪ থেকে ৫ সেকেন্ডের মধ্যে ১০ থেকে ১২ রাউন্ড গুলি বের হতে পারে।”
হত্যাকাণ্ডে খুব অল্প সময় লাগায় এবং প্রায় ১২ রাউন্ড গুলি ব্যবহার হওয়ায় অস্ত্রটি অত্যাধুনিক বলে ধারণার কথা জানান তিনি।
শাহজাহানপুর থানার ওসি জানান, তারা গুলির খোসাগুলো এখনও পরীক্ষা করতে সিআইডিতে দেননি। দুই একদিনের মধ্যে এগুলো দেওয়া হবে।