প্রীতি সংসারের হাল ধরবেন, আশা ছিল পরিবারের

ছোট ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী, নিজেও একটি কলেজ থেকে এইচএসসির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন; বাবার স্বল্প বেতনে দুজনের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে সংসার চালানো কঠিনই ছিল। তাই আসছে এপ্রিল মাসেই একটি চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সামিয়া আফনান জামাল প্রীতির।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2022, 10:00 AM
Updated : 25 March 2022, 10:09 AM

কিন্তু ঢাকার শাহজাহানপুরে বৃহস্পতিবার রাতে এক আওয়ামী লীগ নেতার মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে চালানো গুলিতে প্রীতির মৃত্যুতে তছনছ হয়ে গেছে সব স্বপ্ন।

শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে আহাজারি করছিলেন প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মেয়েটা বদরুন্নেছা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল, কিন্তু ফলাফল খারাপ হয়েছে। আবার দেবে ঠিক করেছিল। কথা ছিল এপ্রিলে ১৫ হাজার টাকা বেতনে একটা কোম্পানিতে চাকরিতে যোগ দেবে।”

মেয়ে হারানো এই বাবা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলেন, “দিন এনে দিন খাই; ভাগ্যের চাকা এভাবেই ভেঙে গেল।”

৫৪ বছর বয়সী জামাল উদ্দিন মিরপুর-২ নম্বরে একটি কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। স্ত্রী হোসনে আরা, এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে সামী ও কলেজপড়ুয়া মেয়ে প্রীতিকে নিয়ে কোনোমতে তার সংসার চলছিল বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার সহায়তায়।

মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে জামাল বলেন, “গরীব মানুষ, মামলা করেই বা কী হবে? এগুলো (মামলা) নিয়ে ভাবতে পারছি না, মেয়েই আমার চলে গেল।”

প্রীতিদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। ঢাকার শাহজাহানপুরের কাছেই শান্তিবাগে তাদের ছোট্ট দুই কামরার বাসা।

২২ বছর বয়সী প্রীতি চার দিন আগে খিলগাঁওয়ের তিলপা পাড়ায় গিয়েছিলেন বান্ধবী সুমাইয়া আক্তারের বাসায়।

সুমাইয়া বলেন, তার মা গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় প্রীতিকে কদিন বাসায় থাকতে বলেছিলেন। সেই অনুরোধেই চারদিন তার বাসায় ছিলেন প্রীতি।

বৃহস্পতিবার সুমাইয়ার বাসা থেকে নিজের বাসায় ফেরার জন্য তিলপা পাড়া থেকে রওনা হলেও প্রীতি কিছুক্ষণ পর ফোন করে খিলগাঁও রেলগেইটের কাছে যেতে বলেন সুমাইয়াকে। পরে সেখান থেকে দুই বান্ধবী আবার সুমাইয়ার বাসায় যাওয়ার রিকশা নেন।

রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলী মানামা ভবনের সামনের সড়কে মাইক্রোবাসে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থলের কাছে রিকশায় থাকা প্রীতিরও গুলি লাগে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার আবদুল আহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টিপুর গাড়িতে আরও কয়েকজন ছিলেন। খিঁলগাও রেল গেইট ও শাহজাহানপুর আমতলার মাঝামাঝি এলাকায় গাড়িটি যানজটে পড়েছিল।

“তখন রাস্তার বিপরীত দিকে থেকে একজন দুর্বৃত্ত হেলমেট পরে গাড়ির জানালা দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে ওই হেলমেট পরা দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যায়।”

শুক্রবার জুমার নামাজের পর মতিঝিল এজিবি কলোনি মাঠে টিপুর জানাজা হয়। আর প্রীতিকে শাহজাহানপুরে দাফন করার কথা রয়েছে বলে জানান তার বাবা।