‘এবার এমপিওভুক্তি নিয়েই বাড়ি ফিরব’

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য পরিচালিত স্কুলগুলোর স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2022, 05:00 PM
Updated : 22 March 2022, 05:00 PM

দাবি আদায়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দেড় হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করছেন।

দেড় বছরের সন্তানকে নিয়ে এ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া শিক্ষক রেজওয়ানা নাসরিন মালা বলেন, “পটুয়াখালী থেকে অনেক  কষ্ট করে এসেছি। তিন দিন ধরে এই অসহ্য গরমে আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি, এই মুজিববর্ষে আমাদের স্কুলগুলোকে এমপিওভুক্ত করে দিন।”

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র আহ্বায়ক আহ্বায়ক আরিফুর রহমান অপু।

তিনি জানান, এর আগেও একই দাবিতে বেশ কয়েকবার আন্দোলন হয়েছে। গত বছর এমপিওভুক্তিসহ ১১ দফা দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচির আয়োজনে বাধা দিয়েছিল পুলিশ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খানন মেনন তখন আমাদের এক মাসের মধ্যে দাবি আদায়ের আশ্বাস দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

“এবার আমাদের এক দফা, এক দাবি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তিকরণ। আমরা এখানে প্রায় ১৫শ থেকে দুই হাজার লোক তিন দিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছে।”

নিজেদের অবস্থান জানিয়ে শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এবার আমরা এমপিভুক্তি নিয়েই বাড়ি ফিরব।”

সরকারি উদ্যোগের পাশপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এসব বিশেষায়িত স্কুল।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে কিছু স্কুলের শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পেলেও বেশিরভাগ স্কুলের শিক্ষক সেই সুবিধা পান না। বিত্তশালী ব্যক্তিদের সহায়তা ও অনুদানে চলে এসব প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষক সমিতির নেতারা জানান, বেসরকারি উদ্যোগকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা করার লক্ষ্যে সরকার ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০০৯’ প্রণয়ন করে।

এছাড়া ২০১৯ সালে প্রতিবন্ধীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে আরও দুটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।

‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) ব্যতীত প্রতিবন্ধী সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯’- এ দুটি নীতিমালা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে।

আরিফুর রহমান বলেন, “সারা দেশে এক হাজার ৭২৬টি প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রায় ৬০-৭০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী জড়িত, প্রায় ছয় লাখ শিক্ষার্থী এসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।

“কিন্তু শিক্ষকতার মহান পেশায় আমাদের শিক্ষকরা সবচেয়ে নিগৃহীত। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি।”

ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১২টি হাইকেয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি সহায়তা না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন হাইকেয়ার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও  অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় টাকায় যদি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলতে পারে, মাধ্যমিক বিদ্যালয় চলতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে, তাহলে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় কেন নয়?

“আমাদের হাইকেয়ার স্কুলের কথাই যদি বলি, বিগত ৪০ বছর যাবৎ দেশের নিজস্ব অর্থায়ন ও জনগণের অনুদানে ১২টি জায়গায় স্কুলগুলো চলছে। শুধু দানের টাকায় এসব বিদ্যালয় চালানো একেবারেই অসম্ভব।

“এটা শুধু কিছু নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় চালানো সম্ভব হচ্ছে, যারা কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে একটা শিক্ষাব্যবস্থা চলতে পারে না।”