আলাদা বিছানায় ‘ভালো আছে’ লাবিবা-লামিসা, একে অন্যকে খুঁজছে

জন্মের পর থেকে প্রায় তিন বছর ধরে একে অন্যের শরীরের সঙ্গে জোড়া লাগানো জমজ শিশু লাবিবা-লামিসা অস্ত্রোপচারে আলাদা হওয়ার পর এখন ভালো আছে; শিগগরিই তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থেকে সাধারণ বেডে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2022, 12:19 PM
Updated : 22 March 2022, 12:19 PM

অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ৩৮ চিকিৎসক দলের প্রধান এবং হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ-উল হক কাজল মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক ভালো আছে লাবিবা-লামিসা।”

সকালে তারা পানি খেয়েছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, “তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ভালো আছে, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকার আর প্রয়োজন নেই।”

সোমবার তৃতীয় দফায় টানা ১২ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারে আলাদা করার পর যমজ দুই শিশুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয় আলাদা বিছানায়, রাতেই তাদের জ্ঞান ফিরেছিল।

মঙ্গলবার তাদের বাবা লাল মিয়াও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছেন, তার মেয়েরা ভালো আছে, আলাদা বিছানায় থাকায় একজন আরেকজনের খোঁজ করছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা নীলফামারীর এই জোড়া লাগানো এই শিশুদের আলাদা করার চ্যালেঞ্জে নামেন দুবছর আগ। এর মধ্যে দুদফা অস্ত্রোপচার করেও তাদের শরীর আলাদা করতে শতভাগ সফলতা মেলেনি। 

সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চিকিৎসকেরা পিঠ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত জোড়া লাগানো শিশু লাবিবা ও লামিসাকে আলদা করেন। এরপর রাত ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে, শিশু দুটির জ্ঞান ফিরেছে।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার যদুনাথপুর গ্রামের লাল মিয়া-মনুফা বেগমের সন্তান লাবিবা-লামিসা। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল তাদের জন্ম।

জোড়া শিশু দুটির যখন নয় দিন বয়স, তখন রংপুর মেডিকেল কলেজে গেলে তাদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সে সময় তাদের এক দফা অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা এক বছর পর আসতে বলেন।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেলে তাদের দ্বিতীয় দফা অস্ত্রপচার করা হয়, এরও তার তিন মাস পর সোমবার অস্ত্রোপচারে আলাদা করা হয় শিশু দুটিকে।

চিকিৎসক আশরাফ-উল হক কাজল মঙ্গলবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খিদের জন্য সকালের দিকে একটু কান্না করেছিল, এখন অনেক ভালো আছে।… শিগগিরই নরমাল বিছানায় দেওয়া হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ বেডে দেওয়ার পর থেকে দিন পনের শিশু দুটিকে হাসপাতালে থাকতে হবে।

লাবিবা-লামিসার বাবা লাল মিয়া বলেন, “আমার দুই বাচ্চাকে আলাদা দেখতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। খোদার কাছে লাখো শুকরিয়া। আর চিকিৎসকদের কী বলে যে ধন্যবাদ দেব...।

যেভাবে আলাদা হল লাবিবা-লামিসা

সোমবার অস্ত্রোপচার শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন চিকিৎসক দলের প্রধান এবং হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ-উল হক কাজল।

তিনি বলেন, শিশু দুটির যোনীদ্বার ও মলদ্বার পৃথক করা হয় প্রথমে। সেই কাজটি করেন শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।

"ওদের যোনীদ্বার, পায়ুপথ ও প্রস্রাবের রাস্তা একসঙ্গে জোড়া লাগানো ছিল। ওগুলোকে ক্ষতি না করে পৃথক করা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেটা সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছি।”

জোড়া মেরুদণ্ড আলাদা করাও চ্যালেঞ্জের ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “স্পাইনাল কর্ডে যদি আঘাত লাগে, তাহলে স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটা নিয়ে খুব ভয় ছিল। কিন্তু নিউরোসার্জনদের দল ওই অস্ত্রোপচারও সফলভাবে শেষ করেছেন।”

সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আশরাফ বলেছিলেন, “এ অস্ত্রপাচার সফল বলছি কারণ, দুটো বাচ্চা পৃথক হওয়ার পর তারা পা নাড়তে পারছে। যদি পা নাড়তে না পারত, তাহলে আমরা বুঝতাম তাদের স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা দুজন পঙ্গু হয়ে যেতে পারত।”

এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৭ সালে জোড়া লাগানো শিশু তোফা-তহুরা ও ২০১৯ সালে রাবেয়া-রোকাইয়াকে আলাদা করা হয়।