পরীক্ষায় প্রতিবন্ধীদের জন্য বাড়তি সময়, অভিন্ন নীতিমালা হচ্ছে

নিয়োগ ও একাডেমিক পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2022, 06:05 PM
Updated : 20 March 2022, 06:05 PM

এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীরা পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ অতিরিক্ত সময় পাবে। প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রুতিলেখকদের যোগ্যতাও নির্ধারণ করা হচ্ছে এই নীতিমালায়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে রোববার অনুষ্ঠিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

নীতিমালা প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়- নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় শ্রুতিলেখকের বিধান চালু থাকলেও প্রতিটি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পদ্ধতিতে এটা করে থাকে। প্রতিষ্ঠান ভেদে শ্রুতিলেখক নিয়োগের বিষয়টি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় প্রতিবন্ধীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। যার কারণে এই অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের ‍উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নীতিমালাটা করা হয়ে গেছে। কিন্তু এখন মন্ত্রণালয় এটা বাস্তবায়ন করেনি। আমরা বলেছি সামনে যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হবে, সেখানে যেন এ্টা বাস্তবায়ন করা হয়।”

মেনন বলেন, “আগে অভিন্ন কোনো নীতিমালা ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছিল। কর্মকমিশনের একটা তাদের মতো করত। অভিন্ন নীতিমালা হওয়ায় এখন প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষা আরও দৃঢ় হবে।”

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, একাডেমিক ও নিয়োগ শ্রুতিলেখকের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক-চতুর্থতাংশ সময় বেশি পাবেন।

অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টা সময়ের বিপরীতে ১৫ মিনিট সময় অতিরিক্ত পাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। এক ঘণ্টার কম সময়ের পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় হবে আনুপাতিক হারে।

যে সব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শ্রুতিলেখকের প্রয়োজন হয় না, তবে ধীরগতিতে নিজ হাতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, তারাও একই হারে অতিরিক্ত সময় পাবে।

প্রতিবন্ধী না হলেও আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে কেউ নিজ হাতে লিখতে অপারগ হলে শ্রুতিলেখক নিয়োগ করে পরীক্ষা দিতে চাইলে সিভিল সার্জন প্রদত্ত চিকিৎসা সনদ প্রদর্শন করে পরীক্ষা দিতে পারবে।

শ্রুতিলেখকদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে খসড়ানীতিমালায় বলা হয়েছে- পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) ও জেএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হবে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর চেয়ে একশ্রেণির নিম্নে অধ্যয়নরত যে কোনো শিক্ষার্থী; এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হবে জেএসসি পাস বা নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত যে কোনো শিক্ষার্থী; এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হবে এসএসসি পাস বা একাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত যে কোনো শিক্ষার্থী; স্নাতক বা ডিগ্রির ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখক হবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা একশ্রেণীর নিম্নে এবং বিভিন্ন বিভাগে অধ্যায়নরত যেকোনো শিক্ষার্থী। 

বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে তাদের সাময়িকসহ অন্যান্য একাডেমিক পরীক্ষার শ্রুতিলেখকের ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য হবে।

অধিকার আদায়ে সড়কে অবস্থানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। ফাইল ছবি

এদিকে সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের চাকরির নিয়োগের পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চেয়ে এক গ্রেড বা একধাপ নিম্নে শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন হবে বলে এতে বলা হয়।

এছাড়া বিএড/বিপিএডসহ প্রফেশনাল কোর্সের ক্ষেত্রে উক্ত প্রফেশনাল কোর্স করেনি এমন যেকোন সময় শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী শ্রুতিলেখক হতে পারবে।

নীতিমলায় বলা হয়েছে, একাডেমিক ও চাকরির ক্ষেত্রে পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নিজ উদ্যোগে শ্রুতিলেখক সংগ্রহ করবেন। এক্ষেত্রে একাধিক শ্রুতিলেখককে মনোনয়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। যাতে কেউ অসুস্থ হলে অপরজন তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

শ্রুতি লেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সহ যাবতীয় তথ্য প্রমাণ হিসেবে মনোনয়নের সময় জমা দিতে হবে।

নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রুতিলেখক নিয়োগে অসহযোগিতা করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তা জবাবদিহির আওতায় আনা হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়।

এতিমের সংজ্ঞা পরিবর্তনের সুপারিশ

পিতৃহীন শিশুদের পাশাপাশি মাতৃহীন শিশুদেরও এতিম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এ জন্য এতিমের সংজ্ঞায় ‘মাতৃহীন শিশু’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে কমিটি।

পাশাপাশি এতিমখানাগুলোতে মানসম্মত সাধারণ শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর জোর দিতে বলেছে কমিটি।

বৈঠকে ‘এতিমখানা (সরকারি ও বেসরকারি) এর নিবন্ধন নীতিমালা ও ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দ’ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়,১৯৪৪ সালের এতিমখানা ও বিধবা সনদ আইন অনুযায়ী,এতিম বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী বালক-বালিকাকে বুঝায় যে পিতৃহীন অথবা পিতা–মাতা বা আইনগত অভিভাবক কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যে সব শিশু পিতৃহীন তাদের পাশাপাশি মাতৃহীন শিশুদেরও এতিম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “যখন কোনো শিশু মাতৃহীন হয়ে যায় তখন অনেক ক্ষেত্রে তারা নিগ্রহ বা অবহেলার শিকার হয়। সে জায়গা থেকে মাতৃহীন শিশুদেরও এতিম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার সুপারিশ করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সাধারণত এতিমখানাগুলোতে হেফজখানা পরিচালনা করা হয়। কিন্তু নীতিমালায় মানসম্পন্ন সাধারণ প্রাথমিক শিক্ষা বা সমমানের শিক্ষার কথা বলা আছে। কমিটি এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুসরণ এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে জোর দিতে বলেছে।”

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের শ্রুতিলেখক নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া প্রকৃত চা-শ্রমিকেরা যাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতাধীন বরাদ্দকৃত ঘরের মালিক হতে পারেন, তা অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত একটি যুগপোযোগী নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।

রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন, বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন, আ কা ম সরওয়ার জাহান এবং আরমা দত্ত অংশ নেন।