খালেদার মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ছে

বিদেশে না যাওয়া এবং নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে আগের দেওয়া শর্তেই দুর্নীতিতে দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ পঞ্চমবারের মতো আরও ছয় মাস বাড়ানো হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2022, 12:56 PM
Updated : 16 March 2022, 12:56 PM

বুধবার বিকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পরিবারের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

"আমি ফাইলটি ছেড়ে দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে," - বলেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, "আগের শর্তে (বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং দেশে চিকিৎসা নিতে হবে) তার (খালেদা জিয়া) মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানোর জন্য মতামত দেওয়া হয়েছে। সব কিছু আগের মতোই, নতুন কিছু যুক্ত করা হয়নি।"  

এর আগে সকালে আইনমন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়াতে দরখাস্ত এসেছে। আইনমন্ত্রণালয় মতামত দেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

এদিকে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সেই আবেদনের বিষয়ের আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর এখনও আবার আমার কাছে আসেনি। তাই কিছু বলতে পারছি না।"

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিকাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সেই আবেদনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় পৌঁছেনি।

"পাঁচটার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয় থেকে অন্য একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বের হয়ে যান। এখন সেই আবেদনটি আসলেও রোববারের আগে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সম্ভবনা নেই।"

এ নিয়ে পঞ্চমবারের মত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হল। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে তার দণ্ডের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। সেই মেয়াদ ২৪ মার্চ শেষ হবে।

প্রতিবার একই শর্তে তাকে কারাগারের বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গতবছর ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। দণ্ডের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলে তিনি কারামুক্ত হন। এরপর চার দফায় দুই বছর তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ থাকছেন। তার আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত সমস্যা রয়েছে। গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন।

সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান চিকিৎসকরা। দীর্ঘ ৮১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ১ ফেব্রুয়ারি তিনি গুলশানের বাসায় ফেরেন।

সে সময় তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকে। তবে দণ্ড স্থগিতের শর্তের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকার তা নাকচ করে দেয়।

আইনমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, শর্তসাপেক্ষে মুক্ত থাকা অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার আবেদন বিবেচনার সুযোগ নেই। তাকে কারাগারে ফিরে তবেই আবেদন করতে হবে।

সিআরপিসির ৪০১(১) ধারায় বলা আছে, যখন কোনো ব্যক্তিকে অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়, তখন সরকার যে কোনো সময় শর্ত ছাড়াই অথবা শর্তসাপেক্ষে শাস্তি স্থগিত করতে পারে অথবা তাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তার পুরো বা যে কোনো অংশ স্থগিত করতে পারে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে।

আরও পড়ুন