নাপা সিরাপে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি: ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জ্বরাক্রান্ত দুই শিশু নাপা সিরাপ পানের পর মারা যাওয়ায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের এই প্যারাসিটামল সিরাপের তিন ব্যাচের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে ক্ষতিকর কিছু না পাওয়ার কথা জানিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2022, 11:24 AM
Updated : 14 March 2022, 12:52 PM

তবে যে বোতলের সিরাপ ওই শিশু দুটিকে পান করানো হয়েছিল, সেই বোতলের নমুনা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর পরীক্ষা করেনি। ফলে শিশু দুটির মৃত্যুর কারণও জানা যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামের এক পরিবারের ৭ ও ৫ বছর বয়সী দুই ছেলের জ্বর হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় দোকান থেকে নাপা সিরাপ কিনে তাদের সেবন করায় পরিবার।

এরপর তাদের বমি শুরু হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়ে বাড়ি আনার পথে রাতে দুজনই মারা যায়।

ঘটনাটি জানার পর পরদিন সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা দোকান পরিদর্শন করে নাপা সিরাপের একটি ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

তিন দিন পর সোমবার বিকালে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ।

তিনি বলেন, আশুগঞ্জের যে দোকান থেকে কেনা ওষুধ সেবনের পর শিশু দুটি মারা গেছে, সেই দোকান থেকে আটটি বোতল জব্দ করেন তারা। এছাড়া ডিপো থেকে আরও দুটি ব্যাচের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রোববার এসব নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়, এর ফল পাওয়া যায় সোমবার দুপুরের পর।

“আমরা এ পর্যন্ত তিনটা নমুনা পরীক্ষা করেছি। ড্রাগ টেস্টিং প্রপাইলিন গ্লাইকল আছে আর ক্ষতিকারক উপাদান ডাইইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যায়নি।”

মাঠ পর্যায় থেকে আরও সেসব নমুনা আসছে, সেগুলোও পরীক্ষা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেগুলোর ফলাফল পরে জানাব। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা যে পরীক্ষা করেছি, পরীক্ষায় মান সঠিক পেয়েছি।”

এই ঘটনা তদন্তে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে মৃত শিশু দুটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলে এসেছে।

যে বোতলের সিরাপ শিশু দুটিকে পান করানো হয়েছিল, তা পরীক্ষা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে মেজর জেনারেল ইউসুফ বলেন, “পুলিশ (সিআইডি) মামলার নমুনা হিসেবে সেটা নিয়ে গেছে। আমাদের দেয়নি। আমাদের দিলে আমরা তা পরীক্ষা করতে পারতাম।”

শিশু দুটির মৃত্যুর কারণ অনুদ্ঘাটিত থাকা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “সিআইডির পরীক্ষার পর প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে, তারা নাপা সিরাপ খেয়েই মারা গেছে কি না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এছাড়া পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে জানা যাবে শিশু দুটি কেন মারা গেল।”

দুই শিশুর মৃত্যুর পর ওষুধ বিক্রেতাদের ওই নির্দিষ্ট ব্যাচের নাপা সিরাপ বিক্রি না করতে অনুরোধ করে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি।

প্যারাসিটামল বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ওষুধগুলোর একটি। আর এর জেনেরিক ওষুধগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের তৈরি করা নাপা সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ইউসুফ বলেন, ওষুধটি নিয়ে জনমনে যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়, সেটাও তাদের সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য।

“ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে, অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। এই অনাস্থা ভাঙার জন্যই সংবাদ সম্মেলন।”

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ওই ব্যাচে মোট ৮২ হাজার বোতল নাপা সিরাপ উৎপাদন করে সারাদেশে বাজারজাত করা হয়েছিল।