প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়ক উপকরণ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাধীনভাবে চলাচল এবং কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে তাদের ব্যবহৃত সহায়ক উপকরণ ও সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন প্রতিবন্ধ্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2022, 06:16 PM
Updated : 10 March 2022, 06:16 PM

বৃহস্পতিবার গুলশানের একটি হোটেলে এক মতবিনিময় সভায় হুইলচেয়ার, সাদাছড়ি, হেয়ারিং এইড, বাইপাপ মেশিনের মত সহায়ক উপকরণ ব্যক্তিগতভাবে আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যহার করা এবং দেশে ভালো মানের হুইলচেয়ার তৈরিতে উৎসাহিত করতে কাঁচামালের উপর শুল্ক হার প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেইঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব সভায় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “নয় মাস বয়সে পেলিও হওয়ার পর ৩০ বছর আমি কাটিয়েছি বাবা-মায়ের সহায়তায়। পায়ের কাজ কী- তা আমি জানতাম না। আমি প্রতি মুহূর্তে চিন্তা করেছি, কীভাবে আমার জীবন চলবে?

“এরপর একদিন সিআরপিতে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে আমাকে এক আপা বললেন স্বাধীনভাবে চলা শিখতে। অনেক খুঁজাখুঁজি করে আমার উপযোগী হুইল চেয়ার আমি পেলাম।”

২০০৭ সালে কেনা সেই হুইল চেয়ারের অবস্থা এখন বেশ করুণ। সালমা বললেন, ওই চেয়ারটা ভেঙে যেতে পারে যে কোনো সময়।

“কিন্তু এটা আমি কোথাও পাচ্ছি না। আমার মত অসহায় অবস্থায় আছে অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। তারা তাদের উপযোগী উপকরণ পাচ্ছেন না, ফলে তাদের চলার পথ কঠিন হয়ে পড়ছে।” 

সহায়ক উপকরণ মেরামতের জন্য দেশে বিভিন্ন পয়েন্ট তৈরি করা এবং সেখান থেকে প্রতিবন্ধীদের সেবা দেওয়া, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়ক উপকরণ বাণিজ্যিকভাবে আমদানির উপর থেকে সকল প্রকার কর প্রত্যাহার করা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পত্তির ওপর খাজনা ও হোলডিং ট্যাক্স মওকুফ করা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পড়ার উপকরণ ব্রেইল মুদ্রণের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করার সুপারিশ তুলে ধরেন সালমা মাহবুব।

এছাড়া রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলকে সক্রিয় করে প্রতিবন্ধী মানুষের সহায়ক উপকরণ ও টেকনোলজি বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা, সহায়ক উপকরণ উৎপাদন ও বিতরণে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায় বিভিন্ন সংগঠন।

সালমা মাহবুব বলেন, সকল সরকারি বিভাগ, অধিদপ্তর ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান মিলে ঢালাওভাবে উপকরণ বিতরণ না করে যাচাই করে উপযোগী, সাশ্রয়ী ও মানসম্পন্ন  উপকরণ বিতরণ করতে হবে।

“কারণ হুইল চেয়ার দিলেই তো হবে না, যে ব্যক্তি এটি ব্যবহার করছেন, সেটা তার জন্য কতটা উপযোগী সেদিকে কেউ লক্ষ্য করছে না। সেই উপকরণ ব্যবহার করে আরও বেশি প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয় তাদের।”

ব্যক্তিগতভাবে সহায়ক উপকরণ আমদানির প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানান উইমেন উইথ ডিজেবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ডব্লিউডিডিএফ) নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন্নাহার মিষ্টি।

“একটা পণ্য আমদানি করতে গেলে নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। এ কাজগুলো সহজ করে না দিলে তারা সামনে এগোতে পারবে না। এ দিকগুলোতে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।”

এনডিডি ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, “সরকার অনেকগুলো মেগা প্রকল্প নিয়েছে। এখন প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মেগা প্রকল্প দরকার।

“সরকারকে এজন্য পলিসি তৈরি করতে হবে। চিন্তাভাবনা করতে হবে। মেগা প্রজেক্ট ছাড়া প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্ভব না। আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন করতে পারলে তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখলে আমাদের জিডিপিতে এক হাজার মার্কিন ডলার তারা কন্ট্রিবিউট করতে পারবে।”

একসেস কাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যালবার্ট মোল্লা অনুষ্ঠানে বলেন, “হুইল চেয়ারই একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য পা, যিনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী তার কানই হচ্ছে হেয়ারিং এইড। আমাদের অনেকেরই তো চশমার প্রয়োজন হয়, চশমা ছাড়া আমরা যেমন চলতে পারি না, ঠিক তেমনি সহায়ক উপকরণ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচল অনেক কষ্টের। তাদের স্বাধীন ও মর্যাদাকর জীবনযাপনে এবং ক্ষমতায়নে এই উপকরণগুলো অবশ্যম্ভাবী।”

‘ইনোভেশন টু ইনক্লুশন’ কর্মসূচির সহায়তায় একসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (এবিএফ) ও লিওনার্ড চেশায়ার (এলসি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশন অব আরবান ডিপিওস অব চিটাগাং (এউডিসি), বাংলাদেশ ডিজেবেল্ড ডেভেলপমেন্ট  ট্রাস্ট (বিডিডিটি), ডিজেবেল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন (ডিসিএফ), কমিউনিটি বেইজড ডিজেবিলিটি অ্যান্ড চাইল্ড প্রোটেকশন অরগানাইজেশেন (সিবিডিসিপিও), ডিজেবেল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (ডিডিআরসি), হিউম্যান রাইটস ডিজেবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এইচডিডিএফ), প্রতিবন্ধী নারীর জাতীয় কাউন্সিল (এনসিডিডব্লিউ) ও জাতীয় তৃণমূল  প্রতিবন্ধী  সংস্থা (এনজিডিও) এর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।