মশা থেকে রেহাই পেতে কী না করছে শাহজালাল বিমানবন্দর!

কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক যন্ত্র কিংবা ধূপ কাজে আসছে না কোনো কিছুই; দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালে মশার ‘অত্যাচারে’ যাত্রী ও তাদের স্বজনরা যেমন অতিষ্ঠ, মশা তাড়াতে গিয়ে নাস্তানাবুদ কর্মীরাও।

গোলাম মর্তুজা অন্তু জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2022, 04:17 PM
Updated : 4 March 2022, 04:19 PM

এ অবস্থা শুধু গত কয়েকদিনের নয়, বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন ধরেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ সবাই। কম-বেশি সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দিনের বেলাতেও মশার আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। আর সন্ধ্যা নামলেই উৎপাত যায় আরও বেড়ে। বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রী ও তাদের স্বজনরা।

সৌদি আরব থেকে ভাই আসার খবরে পরিবারের সঙ্গে তাকে নিতে শনিবার বিমানবন্দরে আসেন পাবনার মো. নাজিমউদ্দীন।

বিমানবন্দরের ভেতরে অপেক্ষমাণ নাজিমের সঙ্গে মশা প্রসঙ্গে কথা বলতেই একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, “কোথাও একদণ্ড দাঁড়ানো যায় না। এত্ত মশা জীবনেও দেখিনি। আমরা গ্রাম থেকে বিমানবন্দর দেখতে আসি। আর এসে মশার কামড় খাচ্ছি।”

সরেজমিনে দেখা যায়, মূল টার্মিনালের ভেতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কর্মকর্তাদের চেয়ারের নিচে জ্বলছে মশার কয়েল। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন মাথায় মশারির মতো এক ধরনের আবরণ জড়িয়ে।

কোথাও কোথাও মশা থেকে রেহাই পেতে ধূপ জ্বালানো হচ্ছে। কর্মকর্তাদের অনেকে শরীরের অনাবৃত অংশে ব্যবহার করছেন ওষুধ।

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) মশা তাড়াতে সব চেষ্টা চলমান বলে জানাচ্ছে। তবুও পরিস্থিতির এদিক-সেদিক নেই।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, মশা নিধনে বিমানবন্দরের যে প্রক্রিয়া চলমান ছিল, সেটিই আছে।

“গেটগুলোতে ইলেকট্রিক মসকিউটো কিলার যন্ত্র বসানো হয়েছে। নিয়মিত ধূপ দেওয়া হচ্ছে। বিমানবন্দরে ধূপ জ্বালানো শোভনীয় না। তবু মশা মারতে ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে আমরা মশা থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছি।”

বিমানবন্দরের এপ্রোন এলাকায় মশা নিধনে নিয়মিত ফগিং মেশিন দিয়ে ওষুধও ছিটানো হয় বলে জানান তিনি।

“এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমি কথা বলেছি। আমি নিজেও ভ্রমণ করে দেখেছি উড়োজাহাজের ভেতরে মশা। বোর্ডিংয়ের সময় দরজা খুললে মশা ঢুকে পড়ে।”

মফিদুর রহমান বলেন, “এয়ারলাইনসগুলোকে বলা হয়েছে, যাত্রী প্রবেশের আগে উড়োজাহাজে একবার মশার ওষুধ স্প্রে করতে। এটি করা হচ্ছে। তারপরও মশা বেশি। কারণ, বিমানবন্দর এ শহরের সবচেয়ে পরিষ্কার ও আলোকিত একটি জায়গা।”

হজরত শাহজালাল ‍আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২ এর সামনে রোববার সন্ধ্যায় বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের অপেক্ষায় স্বজনরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

আশপাশের ৫ কিলোমিটার জায়গা পরিষ্কার না থাকায় মশা উড়ে বিমানবন্দরের আসছে বলে তিনি জানান।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, মশা আসছে উত্তরা-মিরপুর-বাউনিয়া এলাকা থেকে। প্রায় দুই হাজার একর আয়তনের বিমানবন্দরে অনেকগুলো জলাভূমি রয়েছে। যেগুলো এখন নিয়মিতভাবে পরিচর্যাও করা হয়। এরপরও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই নেই।

বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্প্রে দিয়েও মশা ঠেকানো যাচ্ছে না। মশার জ্বালায় ফ্লাইট ডিলে হয়েছে এমন নজিরও আছে।”

বিমানবন্দর এলাকায় কিছু সময় থাকলেই এমন তিক্ততার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সবাইকে। এক নম্বর টার্মিনালের ক্যানোপি-১ এর সামনের গাড়ি রাখার জায়গায় অপেক্ষমাণদের মশা থেকে রেহাই কেউ হাত-পা নড়াচড়া করতে দেখা যায়। পরনের মাফলার খুলে তা দিয়েই মশা দূর করার চেষ্টা করছেন। পত্রিকা বা কাগজ হাতে মশা তাড়াচ্ছেন অনেকে।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ২০ ফেব্রুয়ারি শাহজালালে মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানকে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় ১ নম্বর টার্মিনালে ঢুকতেই ক্যানোপিতে দেখা যায়, একজন কর্মী মাটির পাত্রে ধূপ জ্বালাচ্ছেন। একজন আনসার সদস্য বললেন, সন্ধ্যার এই ঘণ্টাখানেক সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়ে আসতে থাকে বিমানবন্দরে।

কুষ্টিয়া থেকে আসা মধ্যবয়সী আব্দুস সালাম জানান, তিনি নিজেও সৌদি প্রবাসী। ভাই ও ভাইপোকে তুলে দিতে শনিবার বিমানবন্দরে আসেন। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে মশার কারণে বিমানবন্দরের কোথাও দাঁড়াতে পারছেন না সে কথাই জানালেন তিনি।

সালাম বলেন, “আমি তো ঢাকায় মোহাম্মদপুরে থাকলাম। কই ওখানে তো এতো মশা নেই। এখানে মশাগুলো ঝাঁক বেইধে এসে আক্রমণ করিছে… এমন আমি জীবনেও দেখিনি। দেশের এতোবড় একটা বিমানবন্দর, তার এই অবস্থা। সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না কেন?”

দুবাইগামী স্বজনকে বিদায় জানাতে দুপুর থেকে বিমানবন্দরে অবস্থান করেন সিলেটের মো. সজীব। বললেন, “সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত মশা ছিল না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের ভেতরে মশার ওষুধ দেওয়ার পর শুরু হলো ঝাঁক বেঁধে মশার উড়াউড়ি। এতো মশা আমি জীবনে আর কোথাও দেখিনি।”