জার্মানি সফর: আইজিপির পরিকল্পনায় ‘পরিবর্তন’

এক লাখ বিছানার চাদর ও বালিশের কভার কেনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) তিন কর্মকর্তার জার্মানি সফরের খবর নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই পরিকল্পনা বদলানোর কথা জানাল পুলিশ সদর দপ্তর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2022, 05:24 PM
Updated : 18 Feb 2022, 05:24 PM

পুলিশ সদরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত রোববার আমরা জিও (সরকারি আদেশ) বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এটার উত্তর এখনও আসেনি।

“জিও বাতিল হলে স্বাভাবিকভাবেই তার জার্মানি সফর বাতিল হয়ে যাচ্ছে। আর সরকার নতুন করে সিদ্ধান্ত দিলে সেটা পরের বিবেচ্য বিষয়।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি আইজিপির ওই সফরের বিষয়ে একটি আদেশ জারি করে। তারপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে।

ওই আদেশে বলা হয়েছে, আইজিপি বেনজীর আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. ফিরোজ উদ্দীন খলিফা এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুদ আলম ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে ৯ দিনের সফরে জার্মানি যাবেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, এক লাখ বিছানার চাদর ও বালিশের কভারের (ডাবল) শিপমেন্টের জন্য ‘ফ্যাক্টরি একসেপটেন্স টেস্টে’ অংশ নিতে এই তিন কর্মকর্তার এই সফর।

পুলিশের জন্য বিছানার চাদর ‘কিনতে’ জার্মানযাত্রার এই খবরে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, পুলিশ বাহিনীর জন্য বিছানার চাদর কেনা হচ্ছে দেশীয় ঠিকাদারের মাধ্যমেই, তবে রঙটা আসবে জার্মানি থেকে। সেজন্য ‘ফ্যাক্টরি একসেপটেন্স টেস্ট’ করতে এই সফরের আয়োজন, জার্মানি থেকে চাদর কেনার জন্য নয়।

কামরুজ্জামান সেদিন বলেন, এই সফরের খরচ বহন করছে দেশীয় ঠিকাদার কোম্পানি। পরিদর্শন দলের সঙ্গে ঠিকাদার কোম্পানির বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন। পুলিশের সাধারণ সদস্যরাই এসব বেডশিট ও পিলো কাভার ব্যবহার করবেন।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না থামায় বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।

“সম্প্রতি স্যোশাল মিডিয়াতে আইজিপি পুলিশ বাহিনীর জন্য জার্মানি হতে এক লাখ চাদর কেনার জন্য জার্মানি সফর করছেন মর্মে একটি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারিত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য এই যে, পুলিশ বাহিনী জার্মানি হতে বালিশের কাভারসহ বিছানা চাদর ক্রয় করছে না। তাছাড়া, জার্মানি বিছানা চাদর উৎপাদন ও রপ্তানিকারক কোন দেশ নয়, তারা ভারী শিল্পের দেশ। এ কারণে আইজিপির চাদর, বালিশের কাভার কেনার জন্য জার্মানি সফরের কোন সুযোগ নেই।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সরকারি আদেশে (জিও) অনবধানতাবশত সৃষ্ট ভাষাগত বিভ্রাট প্রসূত, তথ্যগত বিভ্রান্তির কারণে স্যোশাল মিডিয়াতে একটি অপপ্রচারকারী চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি গুজব আকারে ছড়িয়ে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছ। এই বিজ্ঞপ্তির পর এ সংক্রান্ত সকল বিভ্রান্তির নিরসন হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রত্যাশা।”

বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, এ বাহিনীর জন্য সব সময়ই স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের তৈরি বিছানার চাদর, বালিশের কভার কেনা হয়। চলতি বছরও একইভাবে স্থানীয়ভাবে দরপত্রের মাধ্যমে বিছানার চাদর ও বালিশের কভার সংগ্রহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

“গণক্রয় আইন অনুযায়ী সরকারি ক্রয় কোনো কর্মকর্তা ব্যক্তিগত সামগ্রীর মতো কোনো মার্কেট বা দেশ সফরে গিয়ে কোনো প্রকার সরকারি পণ্য ক্রয় কিংবা সংগ্রহ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া রয়েছে।”