সাগর-রুনি হত্যা: তদন্তকারীদের ‘পেশাদারিত্বে’ আর ভরসা পাচ্ছে না পরিবার

এক দশকেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় বিচার পাওয়ার আশা ছেড়েই দিচ্ছেন স্বজনরা, তাদের কথায় উঠে আসছে তদন্তে আস্থাহীনতার কথা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2022, 11:59 AM
Updated : 11 Feb 2022, 11:59 AM

তবে র‌্যাবের তরফে এখনো বলা হচ্ছে, তারা ‘সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে’ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের সক্ষমতারও কোনো ঘাটতি নেই।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাটে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। সাগর তখন কাজ করতেন মাছরাঙা টেলিভিশনে, আর রুনি এটিএন বাংলায়।

সাগর-রুনি হত্যার পর ওই ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের রোমান।  থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ হয়ে ঘটনার দুই মাস পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

দায়িত্ব পেয়ে ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক আলামত সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থল থেকে বটি, নিহতদের পরিধেয় কাপড়সহ বেশ কিছু বস্তু পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পাঠায় সংস্থাটি। তবে কিছুতেই কিছু হয়নি। হত্যা রহস্য উদঘাটন হয়নি ১০ বছরেও।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

দীর্ঘ সময়েও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারার কারণ এবং কবে নাগাদ সেটা পাওয়া যেতে পারে, এ প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, র‌্যাব যখন কোনো মামলার তদন্ত করে, তখন ‘সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের’ সঙ্গেই করে।

“আমাদের একটা লক্ষ্য থাকে যে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে আমাদের তদন্তের মাধ্যমে সাজা না পান। সাগর-রুনি হত্যার দুই মাস পর র‌্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং র‌্যাব এই মামলার তদন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে করেছে।

“এই মামলার সঙ্গে যারা প্রাথমিকভাবে কাজ করেছে- সিআইডি, ডিবিসহ অন্যান্য তদন্ত সংস্থা এমনকি সাংবাদিকদের কাছ থেকেও তথ্য নিয়ে আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। এই হত্যাকাণ্ডের ১৬০ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্য আমরা নিয়েছি। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে।”

খন্দকার আল মঈন বলেন, এ মামলার তদন্তকে র‌্যাব এবং সরকার এত গুরুত্ব দিয়েছে যে এর আলামত পরীক্ষার জন্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।

“সেখানেও বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। যেগুলো এখনো পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা এখনো এই তদন্ত করছি। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই প্রতিবেদন দিতে পারব।”

তদন্ত শেষ করতে সময় লাগার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিদেশে বেশ কিছু আলামত পাঠিয়েছি। তাদের রিপোর্ট আসতেও কিন্তু অনেক সময় লেগেছে। আমরা এটার বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে সবগুলো দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা টাইম টু টাইম তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিচ্ছি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত আমাদের সময় দিচ্ছেন।”

এ ধরনের মামলা তদন্তে র‌্যাবের কি সক্ষমতা নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, “না এটা কীভাবে বলবেন। আমি বলবো যে এটার পাশাপাশি অনেক চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন ধরনের মামলার তদন্তের দায়িত্ব কিন্তু র‌্যাবকে দেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন যে যখন আদালত কোনো তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাবকে দেয়, তখনই র‌্যাব তদন্ত করে। বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত করতে বাদীপক্ষ গিয়ে র‌্যাবের কথা বলছে। জনগণ বা আদালতের সেই আস্থা রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় মামলার তদন্ত আমাদের দিচ্ছে।”

সাগর-রুনির পরিবার যে আস্থা হারিয়ে ফেলার কথা বলছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কমান্ডার আল মঈন বলেন, “যদিও পরিবার এখনো আমাদের কাছে আসেননি… ব্যপারটা যদি এরকম হয়, তাহলে আদালতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে।”

রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের রোমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “র‌্যাবের এই তদন্তের প্রতি আমাদের ন্যূনতম কোনো আস্থা নেই। ১০ বছর অনেক লম্বা সময়। তারা কিছুই বের করতে পারেনি। পেশাদারিত্ব বা আন্তরিকতা থাকলে তো কিছু একটা বের হয়ে আসত। উল্টো প্রথম দিকে সংস্থাটি আমাদের পরিবারের লোকজনকে হয়রানি করেছে। এছাড়া তাদের কাছে আমরা কিছু পাইনি।”

রোমানের ধারণা, এখন ওই মামলা তদন্তের সঙ্গে র‌্যাবের যেই কর্মকর্তারা যুক্ত, তারা ঘটনা সম্পর্কে ‘প্রাথমিক ধারণাটুকুও রাখেন না’।

র‌্যাব মুখপাত্রের বক্তব্য প্রসঙ্গে রোমান বলেন, “সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরও যদি তিল পরিমাণ অগ্রগতি না হয়, তাহলে তার কী দাম থাকে! এ বিষয়ে আসলে আমাদের বলার আর কিছু নেই।”