র‌্যাব নিয়ে চিঠি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যের ব্যক্তিগত: ইইউ রাষ্ট্রদূত

মানবাধিকার ‘লঙ্ঘনের’ অভিযোগে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যের চিঠিকে তার ‘ব্যক্তিগত’ মত হিসেবে বর্ণনা করেছেন ঢাকায় এ জোটের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2022, 01:06 PM
Updated : 21 March 2022, 06:07 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সাতশর বেশি এমপি রয়েছেন, তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেন।

“ফলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কোনো সদস্য ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের চিঠি লিখলে বিস্ময়ের কিছু নেই। কারা এই চিঠি লেখায় সহায়তা করেছেন, সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধির কাছে তিনি এ চিঠি লিখেছেন।”

র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত ২০ জানুয়ারি ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি জোসেফ বোরেলকে চিঠি দেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানিৎস।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে স্লোভাক চিঠিতে লেখেন, “কয়েক বছর ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণে আরোপ করা হয়েছে ওই নিষেধাজ্ঞা, বিশেষ করে ২০১৮ সালে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হককে হত্যার ঘটনায়।”

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে স্টেফানিৎস চিঠিতে লিখেছেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মানবাধিকার লঙ্ঘন আর দুর্নীতি দেশটির উন্নয়নের উপর কালিমা লেপন করছে।”

চিঠির প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী পদক্ষেপ নিতে পারে, সেই কথাও ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তরে জানান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইলি।

তিনি বলেন, “আমরা যখন কোনো চিঠি পাই, তখন ভালো প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসাবে আমাদের চর্চা হল ওই চিঠির উত্তর দেওয়া। ফলে আমি নিশ্চিত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি যথাযথ প্রক্রিয়ায় পার্লামেন্ট সদস্যের ওই চিঠির উত্তর দেবেন।”

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

এর ধারবাহিকতা্য় র‌্যাবকে শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘে চিঠি দেয় গত সপ্তাহে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওই অভিযোগ আর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নিজে কোনো মতামত দিতে অস্বীকার করেন চার্লস হোয়াইটলি।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র তাদের মত কাজ করে, আমরা আমাদের মতো কাজ করি। তবে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যুতে এর আগে উদ্বেগ জানিয়েছে ইইউ।”

পূর্বের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘আগ্রহ’ থাকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, “বিদেশিরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসতে পারবেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকদিন আগে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তাকে স্বাগত জানাই।

“আমি মনে করি, এটা খুব খোলামেলা দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ এবং সেটা মাথায় রেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আমরা নিশ্চিতভাবে আগ্রহী।”

ডিআরইউর নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব।