পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে শিল্ড প্যারেড এবং মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান রোধে অভিযানে কৃতিত্ব দেখানো পুলিশ ইউনিটের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, "আমরা চাই না পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য অপকর্মে লিপ্ত হন। আমাদের পুলিশ বাহিনীর প্রতি সদস্যের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
"একইভাবে যদি পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য পুলিশ বাহিনীর জন্য অসম্মান-অপমান বয়ে নিয়ে আসেন, শরীরের কোনো জায়গায় পচন ধরলে যেমন কেটে ফেলে হয়, তেমনভাবে আমরা তাকে পরিত্যাগ করব। তার জন্য পুলিশ বাহিনীতে কোনো আশ্রয় নেই।"
ভালো কাজের কারণে পুলিশকে সংবাদে দেখার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "আমরা নিজেদের কোনো অপকর্মের মাধ্যমে, নিজেদের কোনো অন্যায় আচরণের মাধ্যমে সংবাদ হতে চাই না। আমরা আমাদের ভালো কাজের মাধ্যমে সংবাদ হতে চাই।"
জনকল্যাণে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগের কথা জানিয়ে বেনজীর বলেন, "আমাদের দক্ষতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। পুলিশের প্রতি মানুষের যে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা রয়েছে, সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্রতী হতে হবে এবং সর্বোচ্চটুকু নিংড়ে দিয়ে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে।"
মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, "বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অস্ত্র সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে হবে। এ দেশের সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে দেশকে মাদকমুক্ত করতে হবে। আমাদের দেশে কোনো মাদক তৈরি হয় না। কেন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে মাদক আমদানি করতে হবে?
“যুবসমাজের কাছে অনুরোধ, তারা যেন এটি উপলব্ধি করতে পারে। আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে না, তারা মাদকের ফাঁদে পা দেবে না। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।"
আইজিপি বলেন, "বৈশ্বিক করোনা মহামারীর সময়ে আমাদের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। মৃত্যুর পর তাদের সৎকারের কাজেও পুলিশ পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ধান কাটার শ্রমিকদের পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
“এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ২৭ হাজার সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই করোনাভাইরাস মহামারীর যুদ্ধে আমরা আমাদের ১০৬ জন সদস্যকে হারিয়েছি। তারা দেশমাতৃকার জন্য শহীদ হয়েছেন।"
পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের কথা তুলে ধরে বেনজীর আহমেদ বলেন, "আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের সেবার মান উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে পদোন্নয়ন করবো। আমরা নিয়োগের পদ্ধতিও পরিবর্তন করেছি। প্রায় ৪০ বছর পর এই সংস্কার হয়েছে।
“পুলিশের গুণগত মান বৃদ্ধি পেলে এর সুফল ভোগ করবে সাধারণ মানুষ। আমরা চাই বৈষম্যবিহীনভাবে পুলিশ মানুষকে সেবা দিবে৷ পুলিশ হওয়া কোনো পেশা না, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সেবা দেওয়া।”
২০২০ ও ২০২১ সালে বিভিন্ন অভিযানে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান মালামাল উদ্ধারে কৃতিত্ব দেখানো পুলিশ সদস্যদের মাঝে এ অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযান (২০২০)
‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, দ্বিতীয় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ এবং তৃতীয় পাবনা জেলা পুলিশ।
‘খ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ, দ্বিতীয় যশোর জেলা পুলিশ ও তৃতীয় নোয়াখালী জেলা পুলিশ।
‘গ’ গ্রুপে এপিবিএন প্রথম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ দ্বিতীয় ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘ঘ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম, দ্বিতীয় র্যাব-৫ ও তৃতীয় হয়েছে র্যাব-১৫ কক্সবাজার।
‘ঙ’ গ্রুপে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ প্রথম, ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগ দ্বিতীয় ও ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগ তৃতীয় হয়েছে।
আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযান (২০২১)
‘ক’ গ্রুপে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রথম, পাবনা জেলা পুলিশ দ্বিতীয় ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘খ’ গ্রুপে প্রথম কক্সবাজার জেলা পুলিশ, দ্বিতীয় নরসিংদী জেলা পুলিশ ও তৃতীয় নোয়াখালী জেলা পুলিশ।
‘গ’ গ্রুপে এপিবিএন প্রথম, গাজীপুর জেলা পুলিশ দ্বিতীয় ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘ঘ’ গ্রুপে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম প্রথম, র্যাব-৫ রাজশাহী দ্বিতীয় ও র্যাব-১৫ কক্সবাজার তৃতীয়।
‘ঙ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, দ্বিতীয় হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম এবং যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ ও ওয়ারী বিভাগ।
মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযান (২০২০)
‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, কমিল্লা জেলা পুলিশ দ্বিতীয় ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘খ’ গ্রুপে কক্সবাজার জেলা পুলিশ প্রথম, যশোর জেলা পুলিশ দ্বিতীয় ও ঢাকা জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘গ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ, দ্বিতীয় লালমনিরহাট জেলা পুলিশ ও তৃতীয় চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ।
‘ঘ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে র্যাব-৫ রাজশাহী, র্যাব-৪ মিরপুর (ঢাকা) দ্বিতীয় ও র্যাব-১৫ কক্সবাজার তৃতীয় হয়েছে।
‘ঙ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ, দ্বিতীয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রমনা বিভাগ ও তৃতীয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মিরপুর বিভাগ।
‘চ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে হাইওয়ে পুলিশ, দ্বিতীয় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও তৃতীয় রেলওয়ে পুলিশ।
মাদকদ্রব্য উদ্ধার অভিযান (২০২১)
‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ, দ্বিতীয় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও তৃতীয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।
‘খ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ, দ্বিতীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ ও তৃতীয় যশোর জেলা পুলিশ।
‘গ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ, দ্বিতীয় লালমনিরহাট জেলা পুলিশ ও তৃতীয় গাজীপুর জেলা পুলিশ।
‘ঘ’ গ্রুপে র্যাব-৭ প্রথম, র্যাব-১৫ দ্বিতীয় ও র্যাব-১১ তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।
‘ঙ’ গ্রুপে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ প্রথম, ঢাকা মহানগর পুলিশ মিরপুর বিভাগ দ্বিতীয় ও ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগ তৃতীয় হয়েছে৷
‘চ’ গ্রুপে আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ান প্রথম, হাইওয়ে পুলিশ দ্বিতীয় ও রেলওয়ে পুলিশ হয়েছে তৃতীয়।
চোরাচালান রোধে অভিযান (২০২০)
‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ, দ্বিতীয় কুমিল্লা জেলা পুলিশ ও তৃতীয় টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ।
‘খ’ গ্রুপে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ প্রথম, সিলেট মহানগর পুলিশ দ্বিতীয় ও বান্দরবান জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘গ’ গ্রুপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রথম, লালমনিরহাট জেলা পুলিশ দ্বিতীয় ও পঞ্চগড় জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘ঘ’ গ্রুপে র্যাব-৩ প্রথম, র্যাব-১০ দ্বিতীয় ও র্যাব-৭ তৃতীয়।
‘ঙ’ গ্রুপে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মিরপুর বিভাগ প্রথম, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ দ্বিতীয় ও ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ তৃতীয়।
‘চ’ গ্রুপে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন প্রথম, রেলওয়ে পুলিশ দ্বিতীয় হাইওয়ে পুলিশ তৃতীয়।
চোরাচালান রোধে অভিযান (২০২১)
‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ প্রথম, কুমিল্লা জেলা পুলিশ দ্বিতীয় ও সিলেট জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘খ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ, দ্বিতীয় বাগেরহাট জেলা পুলিশ ও তৃতীয় হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ।
‘গ’ গ্রুপে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ প্রথম, পঞ্চগড় জেলা পুলিশ দ্বিতীয় ও লালমনিরহাট জেলা পুলিশ তৃতীয়।
‘ঘ’ গ্রুপে র্যাব-১০ প্রথম, র্যাব-৭ দ্বিতীয় ও র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ তৃতীয়।
‘ঙ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগ, দ্বিতীয় ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগ ও তৃতীয় ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগ।
‘চ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, দ্বিতীয় রেলওয়ে পুলিশ ও তৃতীয় হাইওয়ে পুলিশ।
পাবনা জেলা পুলিশ ২০২০ সালে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ‘ক’ গ্রুপে তৃতীয় হয়, পরের বছর একই গ্রুপে হয়েছে দ্বিতীয়।
এই জেলার সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিবছরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বছরের ‘পারফরমেন্স’ জানতে চাওয়া হয়।
“সেই চাহিদা অনুযায়ী আমরা কতগুলো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলাম, কী পরিমাণ মাদক উদ্ধার করলাম এসবের বিস্তারিত তথ্য পাঠাই। সারা দেশ থেকে আসা এসব তথ্য যাচাই বাছাই করে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কমিটি। এরপরেই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় নির্ধারণ করা হয়।”
২০২১ সালে মাদকদ্রব্য উদ্ধারে ‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয় কুমিল্লা জেলা পুলিশ। এ জেলার পুলিশ সুপার সুপার ফারুক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রুপ নির্ধারণ হয়ে থাকে মূলত থানার সংখ্যার ভিত্তিতে।
“সবচেয়ে বেশি থানা নিয়ে গঠিত জেলা ‘ক’ গ্রুপে। এভাবেই পরবর্তী গ্রুপগুলো তৈরি হয়।”
গাজীপুর জেলা পুলিশ ২০২১ সালে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ‘গ’ গ্রুপে দ্বিতীয় হয়েছে। এ জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশের অনেক ইউনিট আছে যেখানে লোক সংখ্যা কম, কিন্তু থানার সংখ্যা বেশি। সেটা ‘ক’ গ্রুপে চলে যায়।
“অন্য দিকে লোক সংখ্যা বেশি কিন্তু থানার সংখ্যা কম, সেটা ক্রমান্বয়ে নিচের গ্রুপগুলোতে চলে আসে। লোক সংখ্যা যে এলাকায় বেশি, সেই এলাকায় অপরাধও বেশি। ফলে লোক সংখ্যা দিয়ে এই গ্রুপ করা হলে ভালো হত বলে মনে হয়।”