‘এক ঝড়েই’ এতিম হল বৃষ্টি

অসুস্থ নানিকে হাসপাতালে দেখতে মা-বাবা আর নানার সঙ্গে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছিল বৃষ্টি, অটোরিকশায় চেপে সেখানে যাওয়ার পথে সবাইকে হারিয়ে ছয় বছরের মেয়েটি এখন হাসপাতালে শয্যাশায়ী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2022, 02:42 PM
Updated : 21 Jan 2022, 02:42 PM

তিনজনের আসনের অটোরিকশায় ছোট্ট বৃষ্টি বসেছিল বাবার কোলে। শুক্রবার সকালে মাতুয়াইল হাসপাতালের সামনে অটোরিকশাটিকে একটি বাস ধাক্কা দিলে মারা যান নানা আব্দুর রহমান (৬৫), মা শারমিন আক্তার সালমা (২৮), বাবা রিয়াজুল (৪৩)।

ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বৃষ্টি আর অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম (৩৫) এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নানীকে আর দেখতে পারেনি শিশুটি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বৃষ্টি বিপদমুক্ত বলে মনে করছেন দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক।

তিনি বলেন, “বৃষ্টির মাথায় আঘাত লেগেছে। আপাতত মনে হচ্ছে বিপদমুক্ত। তবে ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না “

বৃষ্টির বাবা রিয়াজুল ছিলেন একটি এনজিওর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, মা গৃহিনী, আর নানা মাছ ব্যবসায়ী। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। শুক্রবার সকালেই তারা বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছেছিলেন।

বৃষ্টির বড় মামা নজরুল ইসলাম বলেন, “বৃষ্টির আর কেউ রইল না। এক ঝড়েই ভাগনি আমার এতিম হয়ে গেল।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, শাহরিয়ার নামে বৃষ্টির আট বছর বয়সী এক ভাই গ্রামে রয়েছে।

“ভালোই চলছিল আমার এই বোনের সংসার। সালমার স্বামী কাফসা ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। ভালোই ছিল তাদের জীবন। আর এখন…।”

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাযহারুল ইসলাম বলেন, “মাতুয়াইল মাতৃসদন হাসপাতালের সামনে অটোরিকশাটি রাস্তা ক্রস করে উত্তরপাশ থেকে দক্ষিণপাশে আসার মূহূর্তে কাঁচপুর থেকে ঢাকামুখী একটি বাস সজোরে ধাক্কা দেয়।”

সকাল ৮টার দিকে পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন বলে মেডিকেল ফাঁড়ির পরিদর্শক মো.বাচ্চু মিয়া জানান।

নজরুল জানান, অটোরিকশাটিকে ওই সময় পেছন থেকে ধাক্কা দেয় সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস। তিনি সড়ক পরিবহন আইনের ১০৫ ও ৯৮ ধারায় একটি মামলা করেছেন।

বাসটি আরামবাগ থেকে জব্দ করা হলেও চালক পলাতক বলে জানিয়েছেন ওসি মাযহারুল।

নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত শুক্রবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে শেষ হয়। তাদের মরদেহ রাতেই গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন নজরুল।