শিমুকে হত্যায় নোবেলের সঙ্গে ফরহাদও ছিলেন: পুলিশ

অভিনয়শিল্পী রাইমা ইসলাম শিমুকে তার স্বামী খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল এবং তার বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদ- দুজনে মিলেই হত্যা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2022, 09:01 AM
Updated : 21 Jan 2022, 09:44 AM

নোবেল ও ফরহাদকে তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। 

এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, দাম্পত্য কলজের জেরে নোবেল নিজেই শিমুকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে বাল্যবন্ধু ফরহাদকে ডেকে এনে লাশ গাড়িতে তুলে কেরানীগঞ্জে ফেলে আসেন তারা।  

তবে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর নতুন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, রোববার সকালেও শিমুর সঙ্গে নোবেলের ঝগড়া হয়। তখনই নোবেল ও ফরহাদ তাকে হত্যা করেন।

“নোবেলের বাল্যবন্ধু ফরহাদ ঢাকার একটি মেসে থাকেন। তার তেমন উপার্জন নেই। কয়েকদিন পরপরই তিনি খুব সকালে নোবেলের বাসায় এসে টাকা-পয়সা নিতেন। সেদিনও তিনি সকালে নোবেলের বাসায় যান এবং ওই হত্যাকাণ্ডে নোবেলের সঙ্গে যুক্ত হন।”

গ্রিন রোডের ওই বাসার অন্য ঘরে নোবেল-শিমু দম্পতির ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে ছিল। তারা তখন কিছু ‘টের পায়নি’ বলে স্বজনেরা জানিয়েছিলেন।

শিমু ও নোবেলে মধ্যে কী নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল জানতে চাইলে তা এড়িয়ে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, নোবেল ও ফরহাদ গত বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশ আরো তদন্ত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নোবেল একসময় নেশায় আসক্ত ছিলেন। এখন তিনি কিডনি ও লিভারের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন। ফলে শারীরিকভাবে তিনি অনেকটাই দুর্বল। রোববার সকালে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে শিমুকে একা কাবু করতে পারছিলেন না নোবেল। তখন ফরহাদ বন্ধুর পক্ষ নেন। এক পর্যায়ে শ্বাসরোধে শিমুর মৃত্যু হয়।

অভিনয়শিল্পী রাইমা ইসলাম শিমু

পারিবারিক দ্বন্দ্বে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু খুন হওয়ার কথা শুরু থেকে বলা হলেও কী নিয়ে তাদের বিরোধ, সে বিষয়ে শিমুর আত্মীয়াও কোনো ধারণা দিতে পারেননি।

শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বের কথা জানতাম। শিমুকে নানাভাবে নির্যাতন করত নোবেল। কিন্তু কী নিয়ে দ্বন্দ্ব তা জানি না।”

খোকন বলেন, রোববার সকালে শিমুর ১৭ বছরের মেয়ে আর পাঁচ বছরের ছেলে ওই বাসাতেই ছিল। তবে তারা কেউ ঘটনা সম্পর্কে কোনো কিছু টের পায়নি।

“ওটা নোবেলদের নিজেদের বাড়ি। নিজেদের থাকার ফ্ল্যাটটা তারা বড় করেই বানিয়েছিল। যার কারণে ছেলে-মেয়েদের ঘরগুলোও দূরে দূরে। তারা কিছু শুনতে পায়নি। নোবেল ছেলে-মেয়েদের বলেছিল, তাদের মা সকালে শুটিংয়ে বেরিয়েছে। ছেলেমেয়েরা সেই কথাই সবাইকে বলেছে।”

পুলিশ বলছে, রোববার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে গ্রিনরোডের বাড়িতে শিমুকে হত্যা করা হয়। পরে নোবেল ও ফরহাদ দুটো বস্তায় শিমুর শরীরের দুপাশ মুড়িয়ে মাঝ বরাবর প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন।

এরপর বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে, বাড়ির দারোয়ানকে নাস্তা আনতে বাইরে পাঠিয়ে বস্তাটি নিচে রাখা নোবেলের গাড়ির পেছনে রাখেন। ওইদিন সকালে তারা লাশ নিয়ে মিরপুরের দিকে যান। কিন্তু সেখানে লাশ ফেলার জায়গা না পেয়ে আবারও বাড়ি ফিরে আসেন।

সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর হয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর এলাকার কদমতলীতে ঝোপের মধ্যে তারা লাশ ফেলে আসেন। হত্যার পরদিন কলাবাগান থানায় গিয়ে স্ত্রী ‘নিখোঁজ’ দাবি করে জিডি করেন নোবেল।

সোমবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর সেতুর কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি লাশটি উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। পরে মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তা শিমুর বলে শনাক্ত করেন তার বড় খোকন।

পুলিশ জানায়, শিমুর লাশ উদ্ধারের পর নোবেলের গাড়িতে পাওয়া সুতার সূত্র ধরে হত্যার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়। ওই সুতা দিয়েই লাশ মোড়ানোর বস্তা সেলাই করা হয়েছিল।