‘প্রশ্নপত্রের মধ্যে উত্তর’, জীবন বীমার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

জীবন বীমা করপোরেশনের নিয়োগ পরীক্ষায় ‘প্রশ্নপত্রের মধ্যে উত্তর সাজিয়ে’ জালিয়াতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সহকারী মহাব্যবস্থাপকের (এজিএম) বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2022, 03:38 PM
Updated : 20 Jan 2022, 03:38 PM

বৃহস্পতিবার কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিকী এ মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন সংস্থার সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মামলায় জীবন বীমা করপোরেশনের এমডি জহুরুল হক এবং প্রতিষ্ঠানটির এজিএম মোহাম্মদ মাহবুবুল আলমকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব।

এজাহারে বলা হয়, উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এবং অফিস সহায়ক এই তিনটি পদে নিয়োগ পরীক্ষার এমসিকিউ প্রশ্ন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ‘অভিনব পন্থায়’ তারা জালিয়াতি করেছেন।

“প্রশ্ন কর্তাদের প্রস্তুতকৃত প্রশ্ন ও তার সঠিক উত্তর নিজেদের মতো করে প্রশ্নপত্রের মধ্যে সাজিয়ে তা ছাপিয়ে দেন। পরবর্তীতে তা চাকরি প্রার্থীদের সরবরাহ করেন।”

অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে তাদের উপর অর্পিত সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনকভাবে বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

এজাহারে জীবন বীমা করপোরেশনের এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, “প্রশ্নের উত্তরের ধারাবাহিক ক্রমবিন্যাস পরিবর্তন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।”

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর করপোরেশনের উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও অফিস সহায়ক পদে ৫১২ জন নিয়োগের জন্য এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

জালিয়াতি করে প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজীর নেতৃত্বে একটি দল জীবন বীমা করপোরেশন অফিসে অভিযান চালায়।

এসময় অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে কমিশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর এই বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে মামলা করল ‍দুদক।

প্রশ্নপত্রের ভেতরে যেভাবে ছিল উত্তর

এজাহারে বলা হয়, এমসিকিউ পরীক্ষায় ২ ও ৭ নম্বর প্রশ্ন এবং ডাবল ডিজিট ক্রমের (১০ থেকে ৮০ ক্রমিকের মধ্যে) প্রশ্নের ক্ষেত্রে শেষের ডিজিট ০,২ ও ৭ হলে সঠিক উত্তর ‘এ’ হবে বলে পছন্দের প্রার্থীদের জানানো হয়।   

১ ও ৫ নম্বর প্রশ্ন এবং ডাবল ডিজিট ক্রমিকের শেষের ডিজিট ১ অথবা ৫ হলে সঠিক উত্তর ‘বি’। ৪, ৮ ও ৯ নম্বর প্রশ্ন এবং ডাবল ডিজিট ক্রমিকের শেষের ডিজিট ৪, ৮ ও ৯ হলে সঠিক উত্তর ‘সি’ হবে।

এছাড়া ৩ ও ৬ নম্বর প্রশ্ন এবং ডাবল ডিজিটের ক্ষেত্রে ৩ ও ৬ আছে তার সঠিক উত্তর ‘ডি’ হবে। এসব কৌশল পছন্দের প্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা ‘অবৈধ সুবিধা’ গ্রহণ করেছেন বলে মামলায় বলা হয়।

অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার কর্মকর্তা জহুরুল হক এবং আরেক কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম সরকারি কর্মকর্তা হয়েও এই কাজের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করেছেন বলে এজাহারে বলা হয়।

দুদকের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জীবন বীমা করপোরেশনের এমডি জহুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং মামলার বিষয়েও কোনো বক্তব্য নেই।