জমিতে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ থাকবে না: ভূমিমন্ত্রী

জমিজমার ক্ষেত্রে আইনি ক্ষমতা বা ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র অপব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে ‘কিছু ব্যতিক্রম’ ছাড়া এই ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2022, 11:41 AM
Updated : 20 Jan 2022, 12:44 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনে অধিবেশন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, “পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে কিন্তু অনেক সমস্যা হচ্ছে। এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কীভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে… নানা সমস্যা।

“আমি স্ট্রেইট বলে দিয়েছি, যারা প্রবাসে থাকে, তারা অ্যাম্বাসির মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি এলিজিবল, যারা দেশে আসে তারা নো মোর পাওয়ার অ্যাটর্নি।”

বিশেষ প্রয়োজনে জমিজমাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একজনের ক্ষমতা অন্য ব্যক্তিকে দেওয়ার আইনি প্রক্রিয়াকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ বা ‘আমমোক্তারনামা’ বলা হয়।

এটা থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বন্ধ করে দেব। অনলি যারা ‘ব্যাক রিটেন’ অর ভেরি স্পেশালি প্রিভিলেজড পার্সন তখন ডিসক্রিশনারি পাওয়ার দিয়ে, সে বুঝে তখন সেটা সে করবে।

“আদারওয়াইজ, জেনারেলি নো, এটা আমরা একেবারে বন্ধ করে দেব। এতে দেখা যাবে ধোকাবাজি… কারণ যতই জায়গার দাম বাড়ছে লোভ লালসাও বাড়ছে। এগুলো আমরা এনশিওর করতে চাচ্ছি।”

সাইফুজ্জামান চৌধুরী আরও জানান,  ভূমি অধিগ্রহণ মামলায় (এলএ কেস) মোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) ব্যবস্থা বাতিল করার বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।

“অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের সময় পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। বিশেষত গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ এটার মাধ্যমে অসাধু ব্যক্তির দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

“এজন্য, বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতীত, সাধারণভাবে এলএ কেসে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বন্ধ করার বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।”

ভূমিমন্ত্রী জানান, বিবেচনাধীন ব্যবস্থায়, বিশেষ ক্ষেত্র, যেমন বিদেশে বসবাসরত ব্যক্তিরা বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যটর্নি দিতে পারবেন।

“এছাড়া গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া যাবে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

অনলাইনে ভূমি সম্পর্কিত তথ্য ও সেবায় সফলতার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাইজেশনে অনেকটা সাকসেসফুল হয়েছি। বলতে পারি নামজারি শতভাগ না হলেও শতভাগের কাছাকাছি অনলাইনে চলে গিয়েছি।

“একটি কাটঅফ টাইম দিয়েছিলাম, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আর কোনো মিউটেশন হবে না। আমরা কিন্তু এটাতে সাকসেসফুল। কিন্তু ভেরি রিমোট এরিয়াতে কখনো কোনো সমস্যা হলে… কিন্তু ৯৯ ভাগ আমি বলব ফুললি ডিজিটাইজড।”

অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) পরিশোধ সেবা চালু হওয়ার পাশাপাশি সরাসরি কাগজপত্রের মাধ্যমেও তা করা হচ্ছে জানিয়ে কারণ ব্যাখ্যা করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

“আমাদের অনেক ডেটা এখনো এন্ট্রি হয়নি। ডেটাগুলো যখন সব এন্ট্রি হয়ে যাবে সেখানেও আমরা কাটঅফ টাইম করে ফেলব, যেন ম্যানুয়ালি কোনো ভূমি উন্নয়ন ট্যাক্স নেওয়া না হয়।”

ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে মাঠ পর্যায়ের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, ভূমি উন্নয়ন কর নেওয়া নিয়েও কিন্তু মাঠ পর্যায়ে অনেক হয়রানি আছে।

“আমরা এটাকে আশা করি, এ বছরের মধ্যে যদি ডেটা এন্ট্রি শেষ হয়ে যায়, তাহলে আমরা এবছরের শেষের দিকে ম্যানুয়ালি এলডি ট্যাক্স সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেব।”

মাঠ পর্যায়ে ‘বিবেচনামূলক ক্ষমতা’ বা ‘ডিসক্রিশনারি পাওয়ার’ ব্যবহার করে হয়রানির বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন “ফিল্ড লেভেলে ডিসক্রিশনারি পাওয়ার কমানোর চিন্তা ভাবনা করছি।

“ফিল্ড লেভেলে এখনো জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে এখনো তারা স্বেচ্ছাচারিতা করে, হয়রানি করতে চায়। তো তাদের ডিসক্রিশনারি পাওয়ার আমরা অনেক ক্ষেত্রে কমিয়ে ফেলব।”

মতামতের জন্য বৃহস্পতিবার ল্যান্ড ক্রাইম অ্যাক্ট ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওপিনিয়ন আসলে আমরা এটা নিয়ে কাজ করব। উই আর অন দ্যা মুভ। এভাবেই আমরা কিন্তু কাজ করছি।”

চলমান ভূমি জরিপের বিষয়ে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভের (বিডিএস) কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিডিএস হবে সবশেষ সার্ভে। বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে।

“বরগুনা পটুয়াখালী যেহেতু এখনো শুরু হয়নি, সেখানে আমরা শুরু করব। এটা পাইলট হিসেবে আমরা নিচ্ছি। আর ড্রোনের মাধ্যমে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইমেজ নিয়ে আমরা করব।”

ভূমিমন্ত্রী বলেন, “এটাতে সাকসেসফুল হলে আমরা রেপ্লিকা করব সারাদেশে। আজকে ডিসি সাহেবরা জানতে চেয়েছেন এক সাথে করা যায় কি না। ইটস নট পসিবল।

“কারণ আমাদের এখানে ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মাধ্যমে কিন্তু এই সার্ভেটা করতে হবে। এ্যাকুরেসি ইজ ভেরি ইমপরটেন্ট। বাংলাদেশে ডিজিটাল সার্ভের পরে আর কোনো সার্ভে কিন্তু প্রয়োজন হবে না।”

এক্ষেত্রে শতভাগ নির্ভুল কাজ করার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন টেকনোলজির যুগ। আমরা মডার্ন পসিবল টেকনোলজি ইউজ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে এই সার্ভেটা করব।”