বুধবার লঞ্চটির তিন মালিক ও চারজন মাস্টার-ড্রাইভারকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হলে তাদের জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা। শুনানির পর নৌ-আদালতের বিচারক বিশেষ মহানগর হাকিম জয়নাব জামিন নামঞ্জুর করেন।
আদালতে আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানি করেন আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন। জামিন আবেদনের পাশাপাশি একই ঘটনায় একাধিক মামলার ফলে ‘ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হওয়ার’ শঙ্কা জানিয়ে তিনি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নৌ-দুর্ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, “পুলিশ যে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ, তারা সেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাই মানে না।”
এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রসিকিউটর বেল্লাল হোসাইন বলেন, “একই ঘটনায় দুইবার বিচার করা অসাংবিধানিক।… নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যথাযথভাবে মামলা দায়েরের অনুরোধ জানিয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।”
বেল্লাল বলেন, “একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিনতর হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।”
জামিন আবেদনে আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযান-১০ লঞ্চের মালিকদের নির্দোষ দাবি করে বলেন, “দুর্ঘটনার সময় তারা নৌযানে ছিলেন না। এর জন্য তারা দায়ী নয়।”
নৌ-আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বেল্লাল হোসাইন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “যে সম্পদ থেকে আমরা অধিকার, সুযোগ সুবিধা ভোগ করি, তার দায়-দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। লঞ্চটি যথাযথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা না করার দায় মালিক এড়াতে পারে না।”
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ২৩ ডিসেম্বর রাতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪৭ জনের প্রাণ যায়। তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন আসার পর নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শফিকুর রহমান ঢাকার মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে অবস্থিত আদালতে এই মামলা করেন।
মামলায় আসামিরদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ১৯৭৬ (সংশোধিত ২০০৫) এর ৫৬, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এসব ধারায় আসামিদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মো. শামীম আহাম্মেদ, মো. রাসেল আহাম্মেদ, ফেরদৌস হাসান রাব্বি, মো. রিয়াজ শিকদার, মো. মাসুম বিল্লাহ, মো. খলিলুর রহমান ও আবুল কালাম।
এদের মধ্যে রিয়াজ শিকদার এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের মাস্টার ইনচার্জ, মাসুম বিল্লাহ ড্রাইভার ইনচার্জ, খলিলুর রহমান মাস্টার ও আবুল কালাম ড্রাইভার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
আরও খবর