নারায়ণগঞ্জের ডিসি-এসপির সঙ্গে নানকদের বৈঠক, তৈমুরের প্রশ্ন

নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারের শেষ সময়ে ডিসি ও এসপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নারায়ণগঞ্জ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2022, 04:58 PM
Updated : 13 Jan 2022, 05:31 PM

নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, সেই দাবি নিয়ে এই বৈঠক করেছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের সন্দেহ, প্রশাসনকে প্রভাবিত করতে গিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

আগামী রোববার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে টানা দুই বারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে।

নৌকার প্রার্থী আইভীর হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন নানকসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

নির্বাচনী প্রচার শেষের আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যান তারা। জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ও পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন তারা।

বৈঠকে নানকের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

বৈঠক শেষে নানক সাংবাদিকদের বলেন, “কাল থেকে নির্বাচন প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে।

“এসেছিলাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়কে এ কথাটা বলার জন্য যে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। এর আগেও আমরা বারবার এসেছিলাম।”

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে যাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়, তাদের আইনের আওতায় নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আশ্বস্ত করেছেন যে, শুক্রবার থেকে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, সাদা পোশাকের পুলিশসহ ব্যাপক সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মোতায়েন থাকবে, কোনোভাবেই যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত না হয়।”

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সদরের বরফকল শীতলক্ষ্যা হাউজিং এলাকায় বৃহস্পতিবার প্রচারে অংশ নেন মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

হাতি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী তৈমুর বারবার অভিযোগ করে আসছেন, প্রশাসন তার কর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানি করছে।

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা তো নারায়ণগঞ্জের ভোটার না, তারা এইখানে আসে ক্যান? তারা ডিসি অফিসে বইসা প্রশাসন-পুলিশে প্রভাব বিস্তার করে আমার লোকজনের বাড়িতে বাড়িতে লোক পাঠাইতেছে, আর আমার লোকজনরে গ্রেপ্তার করতাছে, ভয় দেখাইতেছে।”

“আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতাছি। উনি প্রয়োজনে আমারে গ্রেপ্তার করুক, কিন্তু নির্বাচনটা ভালোভাবে হইতে দিক,” বলেন তিনি।

বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুরের পক্ষে তার দলের নেতা-কর্মীরা প্রচার চালাচ্ছেন।

তৈমুর এর আগেও অভিযোগ করেছেন, তার কর্মী-সমর্থকদের হয়রানিতে নানক প্রশাসনকে প্রভাবিত করছেন।    

নানক বলেন, “নির্বাচনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে বিএনপি দলীয় প্রার্থী, যদিও নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন।”

বৈঠক ঘিরে প্রশ্নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “সন্দেহের কোনো কারণ নেই। আমরা তো কোনো গোপন বৈঠক করিনি। প্রধান ফটক দিয়েই আমরা ঢুকেছি, আবার এই ফটক দিয়েই বের হচ্ছি। কাজেই এখানে সন্দেহের কোনো বিষয় নেই।

“যেহেতু এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, আমরা একটি দল করি, দলের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি। আমরা তো আসতেই পারি জেলা প্রশাসেকের সঙ্গে আলোচনা করতে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। কোনোভাবেই যেন নারায়ণগঞ্জের মানুষের শান্তি বিঘ্নিত না হয়, সে ব্যাপারে তো আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন রাখতেই পারি।”

বৈঠকের বিষয়ে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,‘ অবৈধ-অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা যাতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, ভোট যাতে সুষ্ঠু হয় এজন্য তারা সভায় অনুরোধ জানিয়েছেন।”

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি রুটিন বৈঠক।

“তারা ঝুকিপূর্ণ কয়েকটি ওয়ার্ড ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বেশি করে ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েনের কথা বলেছেন। তাদের ভাষ্য সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের প্রার্থী জয়ী হবেন-এ কারণে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।”