কোভিড: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে টিকায় জোর

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হলেও টিকায় জোর দিচ্ছে সরকার; যেসব শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি, আপাতত তাদের স্কুলে না গিয়ে অনলাইনে ক্লাসে যোগ দিতে বলা হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2022, 06:53 AM
Updated : 10 Jan 2022, 11:59 AM

পাশাপাশি স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে, করোনাভাইরাসের টিকার অন্তত এক ডোজ নেওয়া না থাকলে ১২ জানুয়ারির পর তাদের স্কুলে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। টিকা না নেওয়া পর্যন্ত তাদের বাসায় থেকে অনলাইনে ক্লাস করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। 

সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গত বছর সংক্রমণের যে পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছিল, এখন সংক্রমণ বাড়লেও পরিস্থিতি ঠিক সেই পর্যায়েই রয়েছে। তাই আপাতত আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের চিন্তা করছি না।

“আমরা বরং শিক্ষার্থীদের সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে এসে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছি। কারণ এখনকার যেই ওমিক্রন, তাতে শিক্ষার্থীরা বাসায় থাকলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকছে।”

আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, টিকা নেওয়ার জন্য তাদের আর নিবন্ধন লাগবে না। পরিচয়পত্র বা কোনোভাবে পরিচয়ের প্রমাণ দিলেই শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে।

এ মাসের শুরুতে মন্ত্রিসভা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এখনও টিকা নেয়নি, তাদের আপাতত স্কুলে যেতে নিষেধ করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সেই সিদ্ধান্তও ঠিক থাকছে, ১২ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হবে।

“যারা এরই মধ্যে টিকা নিতে পারবে না তারা অনলাইনে বা টিভিতে ক্লাস করবে। আমরা অ্যাসাইনমেন্টের ব্যবস্থাও রাখব।”

তাহলে প্রাথমিকের বা ১২ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কী হবে জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, টিকা না পেলেও তারা স্কুলে যাবে।

“১২ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের ঘটনা কম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে তাদের টিকা দেওয়ার কথা বলা নেই। ফলে এসব শিক্ষার্থীরা টিকা গ্রহণ ছাড়াই স্কুলে যেতে পারছে।”

তবে যেসব শিক্ষার্থী ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য কোনো রোগে ভুগছে, অথবা শ্বাসকষ্টের মত জটিলতা আছে, কিংবা কোভিডে আক্রান্ত হলে যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের আপাতত স্কুলে না গিয়ে অনলাইনে ক্লাসে যোগ দিতে বলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত না হলেও সরকার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং তারা নিয়মিত আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এক সপ্তাহ পর আবারও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২। এদের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৪৪ লাখ, দ্বিতীয় ডোজ ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪, অর্থাৎ টিকা পেয়েছেন ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ শিক্ষার্থী।

৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী এখনও প্রথম ডোজ পাননি জানিয়ে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাদের টিকার অন্তত একটি করে ডোজ দেওয়া যাবে বলেও জানান দীপু মনি।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, ৩৯৭ টি উপজেলায় বা থানায় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকাদান সম্পন্ন করা যাবে, ৩ উপজেলায় ১৭ জানুয়ারির মধ্যে, ৫৬ উপজেলায় ২০ জানুয়ারি, ১৫ উপজেলায় ২২ জানুয়ারি, ৩৫ উপজেলায় ২৫ জানুয়ারি  এবং সবশেষ ১১ উপজেলায় ৩১ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেওয়া শেষ করা যাবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “জেলা অনুযায়ী যদি টিকা দেওয়ার পরিসংখ্যানটা দেখি তাহলে দেখছি কোথাও কোথাও খুব ভালো সংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে আবার অনেক জেলায় তত ভালো দেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে জেলা পর্যায়ে ভালো হয়েছে কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে তত ভালো হয়নি।”

কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “যে টিকাটি ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে সেই টিকাটি সংরক্ষণে একটি বাড়তি  বিশেষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ব্যবস্থা করতে হয়। সেজন্য কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

“শুরুতে রেজিস্ট্রেশন নিয়েও ঝামেলা হয়েছে। অনেকের জন্মসনদ ম্যানুয়ালি ছিল আবার ওই জন্মসনদ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করতে হয়েছে। এসব সমস্যা ছিল কিন্তু এখন সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।এখন শিক্ষার্থীদের জন্য পুরো প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে।”

দীপু মনি জানান, ১০ শতাংশের নিচে টিকা দেওয়া হয়েছে এমন জেলার সংখ্যা চারটি। শতকরা ১০ থেকে ২০ শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে ১২ জেলায়। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ১১টি, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ১০ জেলা, ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ৪ জেলা, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ৪ জেলা, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ৭ জেলা, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ৬ জেলা, ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ৪ জেলা। ৯০ শতাংশের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে দুই জেলায়। 

শিক্ষামন্ত্রী জানান, পাবলিক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এসব মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা  ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থী।

এর মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৮ জন, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৩০২ জনকে। টিকার জন্য মোট নিবন্ধন করেছেন ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৮৭ জন।

তিনি জানান, পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৫ শতাংশের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে কামিল, ফাজিল মাদ্রাসাগুলো অন্তুর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের একটি বড় সংখ্যা রয়েছে।

“এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মঙ্গলবার বসা হবে কিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার কাজ সম্পন্ন করা যায়”- বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

কওমি মাদ্রসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্য কওমিকে বারবার ইয়ের…. বাহিরে রাখতে হচ্ছে।”

এক প্রশ্নর জবাবে দীপু মনি বলেন, “সারাদেশের শিক্ষকদের প্রায় সবার টিকা নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।” 

দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২০ সালের মার্চে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ৫৪৩ দিন পর গত ১২ সেপ্টেম্বর আবার শ্রেণিকক্ষে ফেরে শিক্ষার্থীরা।

দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে তুলে দেওয়া হয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট ও পাঠ মূল্যায়নের মাধ্যমে।

এরইমধ্যে গত নভেম্বরে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে। বাংলাদেশেও ২১ জনের মধ্যে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে দেশে কোভিড রোগী বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। রোববার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৪৯১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা ১৫ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।